Ajker Patrika

গ্যাসের দাম দ্বিগুণ বাড়ানোর প্রস্তাব

আপডেট : ২২ মার্চ ২০২২, ১৪: ২৮
গ্যাসের দাম দ্বিগুণ বাড়ানোর প্রস্তাব

নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের চাপে যখন সাধারণ মানুষের ত্রাহি অবস্থা, তখন গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) দাম বাড়াতে গণশুনানি শুরু করেছে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর দেওয়া শিল্পকারখানা পর্যায়ে ১১৭ শতাংশ এবং গৃহস্থালি পর্যায়ে ১১৬ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপরে এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। তবে বিইআরসির গঠিত কারিগরি কমিটি এসব প্রস্তাবে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করে তারাও দাম প্রস্তাব করেছে। এর আগে পেট্রোবাংলা ২০২২ সালে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের পাইকারি ব্যয় ১৫ দশমিক ৩০ টাকা পড়বে উল্লেখ করে গ্রাহক পর্যায়ে এর দাম ২০ দশমিক ৩৫ টাকা করতে প্রস্তাব দেয়। তবে মূল্যায়ন কমিটি মনে করছে, এই ব্যয় হতে পারে ১২ দশমিক ৪৭ টাকা। বর্তমানে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকা ৩৬ পয়সায়। গণশুনানি শেষের ৩০ দিনের মধ্যে নতুন দাম ঘোষণা করবে বিইআরসি।

বিইআরসি যদি বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবে সাড়া দেয়, তবে গৃহস্থালিতে রান্নার জন্য ২ চুলার সংযোগে বর্তমান দাম ৯৭৫ টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার ১০০ টাকা এবং এক চুলার ব্যয় ৯২৫ টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার টাকা হতে পারে। যদিও বিইআরসির কারিগরি কমিটির প্রস্তাবে দাম বাড়ানোর সুপারিশ করলেও তা বিতরণ কোম্পানিগুলোর তুলনায় কম।

রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোডে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিয়াম) ফাউন্ডেশন হলে চার দিনব্যাপী এই গণশুনানিতে গ্যাসের এ নতুন দাম প্রস্তাব করা হয়। চার দিনব্যাপী গণশুনানির প্রথম দিন সকালে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) তাদের দামের প্রস্তাব করে মূল্যবৃদ্ধির নানান যৌক্তিকতা তুলে ধরে। বিকেলে অংশ নেয় গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)। কারিগরি কমিটির পক্ষ থেকে কমিটির প্রধান দিদারুল আলম বলেন, ‘আমরা ২০২১-২২ অর্থবছরের গ্যাস আমদানির রিয়েল ডেটা যাচাই করেছি। সে হিসাবেই এই দামের সুপারিশ করেছি।’

গণশুনানিতে বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল সভাপতিত্ব করেন। এ সময় কমিশন সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী, বজলুর রহমান, মোহাম্মদ আবু ফারুক ও মো. কামরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল বক্তব্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বিশ্ব প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। তারপরও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। কমিশনের কারিগরি কমিটি বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব পর্যালোচনা করে মূল্যায়ন রিপোর্ট দিয়েছে। সেটি এখন দেখা হচ্ছে।

শুনানিতে অংশ নিয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্পট মার্কেট থেকে আনা গ্যাসের দাম বেড়েছে ৫-৬ শতাংশ। এ জন্য সব গ্যাসের দাম এত বেশি বাড়াতে হবে—এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিতরণ কোম্পানিগুলো গোঁজামিল দিয়ে হিসাব দেখাচ্ছে, যা বাস্তবসম্মত নয়। প্রয়োজনে এলএনজি আমদানি বন্ধ করে খরচ কমানো হোক। তারপরও গ্যাসের দাম বাড়ানো উচিত হবে না।

জানা যায়, দেশে গ্যাস সরবরাহ আসে মূলত দেশীয় গ্যাসফিল্ড এবং বিদেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে। এর মধ্যে বিদেশ থেকে আমদানি দুই ধরনের চুক্তির আওতায় হয়। জিটুজি ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় আর স্পট মার্কেট থেকে। তবে দেশীয় উৎসের গ্যাসের দাম বাড়েনি, জিটুজি ভিত্তিতে আনা গ্যাসের দামও বাড়েনি। দাম বেড়েছে শুধু স্পট মার্কেট থেকে আনা গ্যাসের। যার পরিমাণ সামান্যই।

২০১৯ সালে সর্বশেষ গ্যাসের দাম বাড়ানোর আদেশে পাইকারি দাম প্রতি ঘনমিটার ১২ দশমিক ৬০ টাকা করা হয়। এর মধ্যে ভর্তুকি দিয়ে প্রতি ইউনিট ৯ দশমিক ৩৭ টাকায় বিক্রির নির্দেশ দেয় বিইআরসি।

দাম বাড়ানোর উপযুক্ত সময় এখন নয়: বিশেষজ্ঞ মত

অধ্যাপক ড. বদরূল ইমামজ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরূল ইমাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন মোটেই দাম বাড়নোর জন্য উপযুক্ত সময় না। এখন সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে দাম না বাড়িয়ে এর বিকল্প হিসেবে তিনি তিনটি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রথমত, গ্যাসের সিস্টেম লস কমানো। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের সিস্টেম লসের কারণে বড় অংকের গ্যাস চলে যায়। এটা কমাতে পারলে তা থেকে অনেকখানি চাহিদা মেটানো সম্ভব। দ্বিতীয়ত, ওয়ার্কওভার করে আরও কিছু গ্যাস আনা সম্ভব। পুরোনো কূপে ওয়ার্কওভার করলে অনেক জায়গায় গ্যাস আসে। দেশে এর বেশ কিছু সাফল্য আছে। সেই ওয়ার্কওভার প্রোগ্রামগুলো যদি জোরদারভাবে করা যায়, তাহলে এই মুহূর্তে অনেক গ্যাসের জোগান দেওয়া সম্ভব। তৃতীয়ত, দীর্ঘ মেয়াদে যদি অনুসন্ধান করা যায়, তাহলে গ্যাস আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত