পুরো থাইল্যান্ড পর্যটকদের জন্য কোনো না কোনোভাবে সেজে থাকে। এই যেমন ফুকেটের কথা বলি। খাবারের জন্য দেশটির অন্যান্য অঞ্চলের সুনাম থাকলেও ফুকেট সবকিছু ছাপিয়ে আলাদা জায়গা দখল করে নিয়েছে বহু বছর আগে। এখানে রয়েছে থাইল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চলের খাবারের সমারোহ। এ জন্য শহরটি ইউনেসকো থেকে ‘সিটি অব গ্যাস্ট্রোনমি’র স্বীকৃতি পেয়েছে। চায়নিজ-পেরানাকান, মুসলিম, দক্ষিণ থাই এবং ভারতীয় খাবার পাওয়া যায় এখানে। হক্কিয়েন নুডলস, প্যান্ডান চিকেন কারি, চা-চাক, ডিম সাম ও স্থানীয় স্ট্রিট ফুড—সবই যেন স্বাদে অনন্য।
ফুকেটে সামুদ্রিক খাবার পাওয়া যায়। এর বিশেষত্ব হলো, চাইলে এসব খাবার কম বা বেশি ঝাল দিয়ে নিজের মতো করে খাওয়া যায়।
সকালের স্থানীয় খাবার
ফুকেটের সকালের শুরুটা করতে পারেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মন সম্প্রদায়ের তৈরি নুডলস দিয়ে। এটি সাধারণ নুডলসের মতো নয়। টক-মিষ্টি স্বাদের এই নুডলস থাই পরিবারগুলো সাধারণত বড় টেবিলে বসে একসঙ্গে খায়। নুডলসের সঙ্গে থাকে তরকারি। সবাই নিজের মতো করে তরকারির সঙ্গে নুডলস মিশিয়ে নেয়। কেউ একটু বেশি ঝাল পছন্দ করে, কেউ হালকা। ব্যাংককের লোকেরা এটাকে কানোম জিন নামইয়া বলে ডাকে। এ ছাড়া এই নুডলসের আরও একটি বিশেষ রেসিপি আছে। তাকে বলা হয় কাং ক্রাটি। এটি নারকেলের দুধে তৈরি ক্রিমি তরকারির সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। এর সঙ্গে থাকে সবজি, সরিষাপাতার আচার, থাই বেসিল ও শুকনা সারডিন।
ঠান্ডা পানীয়
ফুকেটের জনপ্রিয় ঠান্ডা পানীয় চা-চাক। ভাবতে পারেন, চা আবার ঠান্ডা হয় কীভাবে! সেখানকার শ্রমিকেরা চিনি ছাড়া চা খেতে পারতেন না। তাই চায়ের তেতো স্বাদ কমানোর জন্য গরুর দুধ মিশিয়ে দেওয়া হতো। সেখান থেকে আজকের চা-চাক। এখন এটি হয় ক্রিমি ও মিষ্টি। অনেকটা ক্যারামেলের মতো স্বাদ এর। এতে সাধারণত বরফ দিয়ে পরিবেশন করা হয়। তাই গরমের দিন এটির বেশ চাহিদা থাকে।
হক্কিয়েন নুডলস
ফুকেটের চুই-চুই নুডলস চীনের জনপ্রিয় খাবার। তবে চীনের মূল রেসিপি থেকে ফুকেটের রেসিপিতে পরিবর্তন রয়েছে। এখানকার চায়নিজ সম্প্রদায় এই নুডলস সামুদ্রিক খাবারের সঙ্গে পরিবেশন করে। ছোট ছোট শামুক, ডিমের কুসুম, শুকনা পেঁয়াজ, সবুজ সবজি ও কালো মরিচ দিয়ে এই নুডলস রান্না করা হয়। এর সঙ্গে চুলায় রান্নার কারণে নুডলসে যোগ হয় ধোঁয়াটে স্বাদ। ফলে এই স্মোকি নুডলস হয়ে ওঠে আরও সুস্বাদু।
মিষ্টি ও ডেজার্ট
ভ্রমণে গিয়ে স্থানীয় মিষ্টিজাতীয় খাবারের প্রতি অনেকের আকর্ষণ থাকে। ফুকেটে গেলে ওহ আউ খেয়ে দেখতে পারেন। এটি মূলত ঠান্ডা জেলিজাতীয় মিষ্টি। পাকা কলা, রেড বিন ও সামান্য চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হয় এটি। ওপরে দেওয়া হয় বরফের কুচি। এই খাবার ফুকেটের সংস্কৃতির অংশ। সেখানকার বিভিন্ন দোকানে এটি পাওয়া যায় খুব সহজে; বিশেষ করে গরমের সময় এটি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ঝাল ও টক স্বাদের স্যুপ
ফুকেটের বিশেষ স্যুপ তোম সোম প্লা। এটি তৈরি হয় কলাগাছের আঁশসমৃদ্ধ নরম কাণ্ড ব্যবহার করে। এটি স্যুপে যোগ করে হালকা মিষ্টি ও টক স্বাদ। এ স্যুপে থাকে কাজুবাদাম, সুইট গ্রুপার মাছ, বিভিন্ন স্থানীয় সবজি ও তেঁতুল। এটি প্রথম চুমুকে আপনাকে সতেজ করে তুলবে। ফুকেটে সকালের বা মধ্যাহ্নভোজের জন্য এটি জনপ্রিয় ও স্বাস্থ্যকর খাবার।
ভেজিটেরিয়ান ও ভেগান
খাবারের জন্য জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে এখন বাহারি ভেজিটেরিয়ান ও ভেগান খাবারের সমাহার চোখে পড়ে। ফুকেটেও এ ধরনের খাবারের অভাব নেই। অনেক রেস্টুরেন্টে নারকেলের স্যুপ, টফু ও সবজি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার পাওয়া যায়। হক্কিয়েন নুডলসও ভেজিটেরিয়ানদের জন্য আলাদা করে তৈরি করা হয়।
থাইল্যান্ডে যাঁরা দ্বীপ ভ্রমণে যেতে চান, তাঁদের অন্যতম গন্তব্য এই ফুকেট। পাশাপাশি বাহারি খাবারের জন্যও এটি বেশ জনপ্রিয়। তাই ভোজনরসিক পর্যটকেরা এখানে একের মধ্যে দুই আনন্দ উপভোগ করেন।
সূত্র: লোনলি প্ল্যানেট