ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের রংপুর জোনাল অফিসে উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে। গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকার বিমা পরিশোধ না করে অফিসের মালপত্র বিক্রি করে পালানোর চেষ্টা করছিলেন কর্মকর্তারা—এমন খবর পেয়ে গ্রাহকেরা দ্রুত অফিসে গিয়ে তাঁদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা। আজ রোববার বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চলছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার মধ্যরাতে অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী আসবাব ও দামি সরঞ্জাম বিক্রি করে বাইরে নেওয়ার চেষ্টা করলে সন্দেহ হয় স্থানীয় গ্রাহকদের। তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে অফিসে গিয়ে মালপত্র আটক করেন এবং কর্মকর্তাদের জবাবদিহির জন্য অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আজ সকাল থেকে অফিসের সামনে গ্রাহকের ভিড় করতে শুরু করে দুপুর গড়তেই জাহাজ কোম্পানি-স্টেশন রোডে জামাল মার্কেটের সামনে অফিসের নিচে নগরীর প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, জাহাজ কোম্পানি-স্টেশন রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন গ্রাহকেরা। এ সময় অফিসের লকার, চেয়ার-টেবিল, আসবাবসহ একটি ট্রাক দেখা যায়। অফিস কক্ষে চারজনকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয় বলে জানা গেছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, রংপুর বিভাগের প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকের ১২১ কোটি টাকারও বেশি বিমা দাবি এখনো পরিশোধ করেনি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা টাকা না পেয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন।
রংপুর বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রংপুর বিভাগের আট জেলায় ২৯ হাজার ৫৯৬ জন গ্রাহকের বিমার মেয়াদ শেষ হয়েছে, যার বিপরীতে ১২০ কোটি ৯৭ লাখ টাকারও বেশি পরিশোধ বকেয়া রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে টাকা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও গ্রাহকেরা বছরের পর বছর ধরে শুধু আশ্বাসই পাচ্ছেন।
অবস্থান নেওয়া গ্রাহক নগরীর ভগিবালা এলাকার বৃদ্ধা আকলিমা বেগমের দুই বছর আগে বিমার মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু সেই টাকা দীর্ঘদিন ঘুরেও পাননি। আক্ষেপ করে আকলিমা বেগম বলেন, ‘স্বামী নাই, অনেক কষ্ট করে টাকা জমাইছি। সেই টাকা না দিয়ে অফিস নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে বিমা কোম্পানি লোকজন। আমার কষ্টের টাকা আমি ফেরত চাই। খবর পেয়ে সবার সঙ্গে এখানে অবস্থান নিচ্ছি।’
আরেক গ্রাহক নগরের আদর্শপাড়া গ্রাম এলাকার বাসিন্দা আজিজার রহমান বলেন, ‘ভবিষ্যতে ভালোর আশায় রিকশা চালিয়ে অনেক কষ্ট করে খেয়ে না-খেয়ে ১২ বছর ধরে টাকা জমিয়েছি। সেই টাকা না দিয়ে ফারইস্ট কোম্পানি অফিসের মালপত্র বিক্রি করে পালিয়ে যাচ্ছে। এই টাকা না পেলে পথে বসে যাব। আমার রক্ত-মাংস পানি করা টাকা আমি ফেরত চাই। এ জন্য আজ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি।’
রাস্তায় বসে বিমার কাগজপত্র নাড়াচাড়া করছিলেন আর চোখ দিয়ে জল পড়ছিল হারাগাছ এলাকার সায়েম বাদশা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘বৃদ্ধ বয়সে যেন ভালোভাবে চলতে পারি, সেই আশায় বিমা করেছিলাম। না খেয়ে কষ্ট করে ১০ হাজার টাকা করে জমিয়েছিলাম। মেয়াদ শেষ হয়েছে দুই বছর আগে, কিন্তু এখনো টাকা পাইনি। সরকার কাছে দাবি আমাদের আসল টাকাটা যেন ফেরত নিয়ে দেয়।’
এ বিষয়ে মহানগর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’