তিন দিন ধরে তরুণদের উদ্দীপনায় মুখর ছিল গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। ১৫ থেকে ১৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গ্রিন ফেস্ট ২.০’ অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, সাংস্কৃতিক বন্ধন আর পরিবেশ সচেতনতাকে একসূত্রে গেঁথে তৈরি এই উৎসব ছিল আনন্দ আর শিক্ষার এক অপূর্ব সমন্বয়।
১৫ অক্টোবর এক বর্ণাঢ্য ফ্ল্যাশ মবের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব, যা মুহূর্তেই গোটা ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে দেয়।
১৬ অক্টোবরের আয়োজন ছিল আরও বৈচিত্র্যময়। ‘আমার ক্লাস, আমার থিম’ শিরোনামে শিক্ষার্থীরা নিজেদের শ্রেণিকক্ষ ও বিভাগ সাজিয়েছিলেন নানা সৃজনশীল উপায়ে। দিনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল শিক্ষার্থী ও অ্যালামনাইদের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ, যা নতুন-পুরাতনের এক উৎসাহ ও বন্ধুত্বের মেলবন্ধন। সন্ধ্যায় ‘ওপেন মাইক’ সেশনে শিক্ষার্থীরা গান, কবিতা আর কৌতুক দিয়ে মাতিয়ে রেখেছিলেন সবাইকে। পরে অনুষ্ঠিত হয় এক ভিন্নধর্মী ‘খাদ্য প্রস্তুতি প্রতিযোগিতা’।
উৎসবের শেষ দিন, ১৭ অক্টোবর শুরু হয় ‘কালচারাল ফিউশন’ ও ক্লাসরুম প্রদর্শনী দিয়ে। শিক্ষার্থীরা এসডিজি নিয়ে তাঁদের চিন্তাভাবনা তুলে ধরেন ‘এসডিজি ক্যানভাসে’। পরিবেশ ও স্থায়িত্ব নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে আয়োজন করা হয় বিশেষ সেমিনারের। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইদের আকর্ষণীয় পরিবেশনাও পায় শিক্ষার্থী-শিক্ষক এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের অকুণ্ঠ প্রশংসা।
এ উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ট্র্যাশন শো। সেখানে শিক্ষার্থীরা দেখিয়েছেন ফেলনা নয়, সৃজনশীলতার স্পর্শে পরিত্যক্ত উপকরণও হয়ে উঠতে পারে মূল্যবান সম্পদ।
তাদের পোশাকে ব্যবহৃত হয়েছে প্লাস্টিক, জুট, পুরোনো জিন্স, টুকরো কাপড়সহ নানান বর্জ্য উপকরণ। এসব উপাদান রিসাইকেল করে তারা তৈরি করেছেন দৃষ্টিনন্দন ও ব্যবহারযোগ্য পোশাক, যা একদিকে ফ্যাশনে এনেছে নতুন দিগন্ত, অন্যদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে পরিবেশ সচেতনতার অনুপ্রেরণামূলক বার্তা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দশটি বিভাগের মধ্যে ‘আমার ক্লাস, আমার থিম’ প্রতিযোগিতায় ইইই বিভাগ চ্যাম্পিয়নের গৌরব অর্জন করে, আর সিএসই বিভাগ হয় রানার-আপ। ক্রিকেট খেলায় নিয়মিত শিক্ষার্থীদের দল চ্যাম্পিয়ন এবং এলামনাইদের দল রানার-আপ হয়।
সন্ধ্যার মূল আকর্ষণ ছিল আমন্ত্রিত শিল্পীদের সঙ্গীতানুষ্ঠান। প্রথমে মঞ্চে আসেন খ্যাতনামা লোকসংগীত শিল্পী শাহ মুহাম্মদ শিপন ও তার দল। তাদের বাউল ও লোকসংগীতের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় দর্শকেরা মুগ্ধ হন। উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘লেভেল ফাইভ’-এর প্রাণবন্ত ও উদ্দীপনাময় পরিবেশনার মাধ্যমে।
‘গ্রিন ফেস্ট ২.০’-এর এই সফল আয়োজনে গ্রিন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘এই উৎসব আমাদের শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি ও পরিবেশ সচেতনতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমরা শুধু ক্লাসরুমভিত্তিক একাডেমিক কার্যক্রমেই সীমাবদ্ধ নই; শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, নেতৃত্ব, উদ্যম ও মেধার বিকাশেও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’