চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (চাকসু) নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে ছাত্রশিবির। গত বুধবারের এই ভোটে ২৬টি পদের মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদকসহ (জিএস) ২৪টি পদে জয় পেয়েছে তারা। ভোটে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল খানিকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারলেও সফলতা আসেনি। সংগঠন সূত্রে জানা যাচ্ছে, সাংগঠনিক দুর্বলতা, কোন্দল এবং বিএনপির কাছ থেকে সাংগঠনিক কোনো সুবিধা না পাওয়ায় ভরাডুবি হয়েছে ছাত্রদলের।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টায় সপ্তম চাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এতে ভিপি পদে ছাত্রশিবিরের মো. ইব্রাহিম হোসেন ৭ হাজার ৯৮৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের সাজ্জাদ হোসেন পেয়েছেন ৪ হাজার ৩৭৪ ভোট। জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে ৮ হাজার ৩১ ভোট নির্বাচিত হয়েছেন শিবির-সমর্থিত প্যানেলের সাঈদ বিন হাবিব। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের মো. শাফায়াত পেয়েছেন ২ হাজার ৭৩৪ ভোট।
মাত্র একটি পদে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রদলের প্যানেলের প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান। তিনি এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) পদে পেয়েছেন ৭ হাজার ১৪ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রশিবির প্যানেলের সাজ্জাদ হোছন পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৫ ভোট। এ ছাড়া সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে জিতেছেন তামান্না মাহবুব নামের এক স্বতন্ত্র প্রার্থী।
চাকসুর ইতিহাসে ছাত্রশিবিরের সর্বশেষ জয় এসেছিল ১৯৮১ সালে। দীর্ঘ ৪৪ বছর পর আবারও শিবির-সমর্থিত প্রার্থীরা সেই নেতৃত্বের আসনে ফিরলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১৯৯০-এর ছাত্র ঐক্যের প্যানেল থেকে নির্বাচিত সমাজসেবা সম্পাদক সালাহ উদ্দিন মো. রেজা জানান, ‘’৯০ সালে শিবিরবিরোধী ছাত্র ঐক্যের প্যানেলে ১২টি সংগঠন একত্র হয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছিল। ওই নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের ঐক্যের কাছে শিবিরের প্যানেল হেরে গিয়েছিল। ছাত্রদল এবার সেই ঐক্য দেখাতে না পারায় পরাজিত হয়েছে।’
চাকসু নির্বাচনের ঠিক দুই দিন আগে ছাত্রদলের কোন্দলের বিষয়টি সামনে আসে। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও দায়িত্বে অবহেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হন ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি মামুন উর রশীদ। গত রোববার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর মধ্য দিয়ে ছাত্রদলের কোন্দলের বিষয়টি সামনে আসে নেতিবাচকভাবে। নির্বাচনে পরাজয়ে এটি প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ২০২৩ সালের আগস্টে চবি ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও সেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি এখনো। ফলে দুর্বল সাংগঠনিক শক্তি এবং বিএনপির কাছ থেকে আর্থিক ও মানসিক শক্তি জোগান না পাওয়া, ১৯৯০-এর আদলে সর্বদলীয় প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ও বিএনপির ইমেজ সংকটের মতো বিষয়গুলো ছাত্রদলের পরাজয়ের পেছনে কাজ করেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
যদিও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি নিয়ে কেন্দ্র ভাবছে। আমরা কয়েক দিনের মধ্যে কমিটি দিতে পারব। তবে এখানে আমাদের এজিএস প্রার্থীর তাঁর ওপর আস্থা রেখেছে শিক্ষার্থীরা। এখানে প্যানেল হিসেবে জিততে না পারার পেছনে সাংগঠনিক দুর্বলতা দেখি না।’ চাকসু নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।