রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নাট্যকলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে অবশেষে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। দুই শিক্ষার্থীর আমরণ অনশন ও অন্যদের বিক্ষোভ শুরুর পর আজ রোববার কর্তৃপক্ষ এ তদন্ত কমিটি করার কথা জানিয়েছে।
সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক আখতার হোসেন মজুমদার বিজ্ঞপ্তিতে জানান, নাট্যকলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম-সম্পর্কিত সংবাদ ও ফোনালাপের অডিও প্রকাশিত হয়েছে, সে বিষয়ে তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এম আসাদুল হককে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন ও সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাবির নাট্যকলা বিভাগের প্রভাষক নিয়োগ পরীক্ষা হয়। এতে অংশ নিয়েছিলেন ২৪ জন। সেদিন এক ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষা হয়। এর দুই ঘণ্টার মধ্যে খাতা দেখা শেষে ওই দিনই মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়।
অভিযোগ উঠেছে, পরীক্ষার পর তাসাদুল ইসলাম তারেক, সাইফুল ইসলাম ও শাকিবুল হাসান নামের তিনজন প্রার্থীকে চূড়ান্ত করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে সাইফুল নিয়োগ কমিটির বিশেষজ্ঞ তিতাস জিয়ার সঙ্গে একই নাটকের দলে আছেন। শাকিবুল বিভাগের সভাপতি মেহবুব আলমের ফেলো। আর তারেক টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন বলে একটি ফোনকলের কথোপকথনে উঠে আসে।
বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাহাত ইসলাম হৃদয় দাবি করেন, বিভাগের সভাপতি মেহবুব আলমের সঙ্গে কথোপকথনের অডিও রেকর্ডটি তাঁর। তিনি নিজেও চাকরিপ্রার্থী হিসেবে নিয়োগ পরীক্ষায় বসেছিলেন। তিনি সিজিপিএ ৪-এর মধ্যে স্নাতকে সিজিপিএ ৩ দশমিক ৬৩ ও স্নাতকোত্তরে ৩ দশমিক ৮৬ পেয়ে দুটিতেই প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। রাহাত বর্তমানে রাবির একজন এমফিল গবেষক। এ ছাড়া রোমানিয়ার ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি অব টিমিসুয়ারারও ছাত্র। তবে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় তিনি লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন।
এর পরপর দিনই উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীবকে ই-মেইল করে এ নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ করেন রাহাত। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ২১ সেপ্টেম্বর ডাকযোগে উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠান। নিয়োগ বাতিল করতে একটি লিগ্যাল নোটিশও পাঠান তিনি। কিন্তু তারপরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছিল না। এর মধ্যে রাহাতের সঙ্গে সভাপতি মীর মেহবুব আলমের কথোপকথনের রেকর্ড সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
তখন সভাপতি দাবি করেন, প্রযুক্তির সাহায্যে এই ফোনকল রেকর্ড তৈরি করা হয়েছে। এটি ভুয়া। এই অবস্থায় নাট্যকলা বিভাগের থিয়েটার অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (রুটা) ১০ হাজার টাকা ফি দিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ফরেনসিক সাইকোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসে (বিআইএফপিএস) অডিও রেকর্ডটির ফরেনসিক পরীক্ষা করায়। ৯ অক্টোবর দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাহাতের কথোপকথনটি সভাপতি মীর মেহবুব আলমের সঙ্গেই হয়েছে।
এরপরও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাই তদন্তের দাবিতে বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাদেক রহমান ও দ্বিতীয় বর্ষের সাব্বির খান জিয়াম গতকাল শনিবার থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুলও। আজ রোববার একজন অসুস্থ হয়ে পড়লে অন্য শিক্ষার্থীরা বিভাগে বিক্ষোভ শুরু করেন। এরপরই তড়িঘড়ি করে একটি তদন্ত কমিটির কথা জানানো হয়। পরে বিকেলেই এ বিষয়ে রুটার কাছে একটি চিঠি দেন অ্যালামনাস এ এম ফাহদ হোসেন ও আল আরমান হৃদয়। তাঁরা এতে শিক্ষার্থীদের অনশনকে সমর্থন জানিয়ে লেখেন, ‘অডিও কল ও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ঘটনাটিকে কোনোভাবেই ধামাচাপা দেওয়ার সুযোগ নেই। বিভাগের সভাপতি মীর মেহবুব আলমের এমন কাজের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি।’
তাঁরা লেখেন, ‘কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি করেছে। এই অবস্থায় আগামীকাল সোমবারের সিন্ডিকেট সভা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত ফলাফল না হওয়া পর্যন্ত বিভাগের সভাপতি মীর মেহবুব আলমকে সভাপতি পদসহ যেকোনো ধরনের প্রশাসনিক কাজ থেকে সাময়িক অব্যাহতির দাবি জানাচ্ছি।’
অভিযোগকারী চাকরিপ্রার্থী ও বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রাহাত ইসলাম হৃদয় বলেন, কাউকে দায়িত্বে রেখে তার বিরুদ্ধে কমিটি গঠন করা ন্যায়বিচারের লঙ্ঘন। উচিত ছিল চেয়ারম্যানকে অব্যাহতি দিয়ে কমিটি করা। সেটিই আইন। অন্যথায় এটা একটা আইওয়াশ।
সর্বশেষ রাত ৮টার দিকেও ওই দুই শিক্ষার্থী অনশনরত ছিলেন।