প্যারিসের বিখ্যাত ল্যুভর জাদুঘর থেকে হাজার কোটি টাকার রত্ন চুরির ঘটনায় অন্তত দুজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে ফরাসি পুলিশ। এ বিষয়ে প্যারিসের প্রসিকিউটর অফিস জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া এক ব্যক্তি দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
গত সপ্তাহে জাদুঘরের অ্যাপোলো গ্যালারিতে দিনের আলোয় ঘটে এই দুঃসাহসী চুরির ঘটনা। কয়েক মিনিটের মধ্যে চুরির কাজটি সম্পন্ন করে পালিয়ে যায় চোরেরা। তারা জাদুঘর থেকে ফরাসি রাজতন্ত্রের স্মারক হিসেবে থাকা এমন কিছু গয়না ও রত্ন নিয়ে যায়, যার মূল্য ১০ কোটি ডলারের বেশি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা হাজার কোটি ছাড়িয়ে যায়। ল্যুভরের পরিচালক লরেন্স দে কার এ ঘটনাকে ‘ভয়াবহ ব্যর্থতা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
ফরাসি গণমাধ্যমের বরাতে আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) সিএনএন জানিয়েছে, স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পুলিশের হাতে দুই সন্দেহভাজন ধরা পড়েন। দুজনই ত্রিশের কোঠায় এবং পুলিশ তাঁদের আগেও চিনত। আরও অন্তত দুজন সন্দেহভাজন এখনো পলাতক রয়েছেন।
প্রসিকিউটর লর বেকুয়ো জানান, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন প্যারিসের রোয়াসি বিমানবন্দর (চার্লস দ্য গল) থেকে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছিলেন। তবে কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বা চুরি হওয়া রত্ন উদ্ধার হয়েছে কি না—সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি।
এদিকে সন্দেহভাজন গ্রেপ্তারের ঘটনায় ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লরঁ ন্যুনেজ তদন্তকারীদের প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন, ‘তাঁরা দিনরাত পরিশ্রম করেছেন, যেমনটা আমি তাঁদের অনুরোধ করেছিলাম। আমি সব সময় তাঁদের ওপর আস্থা রেখেছি।’
ল্যুভরের অ্যাপোলো গ্যালারিটি ফরাসি রাজমুকুটের রত্নভান্ডার হিসেবে পরিচিত। চোরেরা একটি চেরি পিকার বা ট্রাকের ওপর বসানো মই ব্যবহার করে জানালা ভেঙে জাদুঘরের ওপরের তলায় প্রবেশ করেছিল। পরে মাত্র সাত মিনিটে তারা দুটি উচ্চ নিরাপত্তা কাচের কেস ভেঙে ৯টি অলংকার নিয়ে যায়।
ফরাসি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় জানায়, চুরি হওয়া অলংকারের মধ্যে ছিল হিরা ও নীলা পাথরে তৈরি এক জোড়া টায়রা ও নেকলেস—যা একসময় রানি মেরি-অ্যামেলি ও রানি হর্তেন্স পরিধান করেছিলেন।
ঘটনার তদন্তে প্রায় ১০০ জন তদন্তকারী কাজ করছেন। ঘটনার পর এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলও অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।
ফ্রান্সের বিচারমন্ত্রী জেরাল্ড দারমান স্বীকার করেছেন, ‘এ ঘটনার মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে বিখ্যাত জাদুঘরের নিরাপত্তাব্যবস্থার দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে। জানালা সুরক্ষিত না থাকা এবং প্রকাশ্য রাস্তায় মই থাকা—এসবই আমাদের ব্যর্থতার প্রমাণ।’