নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে আমন ধানের ভেজাল বীজ কিনে বিপাকে পড়েছেন শতাধিক কৃষক। নান্টু চন্দ্র সরকার (৪৮) নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ‘নান্টু ২২’ জাতের বীজ ধান কিনে সর্বনাশ হয়েছে তাঁদের।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা জানান, নান্টু চন্দ্রের কাছ থেকে বীজ ধান কেনার পর চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলাতে বোনেন তাঁরা। কিন্তু খেতে রোপণের আগেই চারাগুলো থেকে ধানের শিষ বের হয়ে যায়। ফলে এলাকার শতাধিক কৃষকের প্রায় ৪০ একর জমিতে ধানের চারা রোপণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
তাঁরা আরও জানান, চলতি আমন মৌসুমে এলাকার শতাধিক কৃষকের কাছে ২৫ মণ নকল বীজ ধান বিক্রি করেছেন নান্টু। প্রতি মণ বীজ ধানের মূল্য নেন ২ হাজার ২০০ টাকা। গত বছর নান্টু পাশের এলাকায় নকল পাট বীজ বিক্রি করেছিলেন। সেবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন অনেক কৃষক।
উপজেলার কাশিপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আলী আহম্মদ জানান, নান্টু চন্দ্র সরকারের কাছ থেকে প্রায় এক মাস আগে বিআর-২২ জাতের ১ মণ বীজ ধান ২২০০ টাকায় কেনেন তিনি। কিন্তু ওই সব বীজ ধানের চারা রোপণ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। পরে আশপাশের এলাকা থেকে অধিক মূল্যে ধানের চারা কিনে এনে নিজের জমিতে রোপণ করেন। একই ধরনের অভিযোগ করেন কৃষক খাইরুল ইসলাম, রাজিব মিয়া, জানু মিয়াসহ আরও অনেকে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় ১০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার বড়তলী-বানিহায়ারী ইউনিয়নে ২ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে হাইব্রিড ধান বীজ থেকে উৎপাদিত ধান বীজ ধান হিসেবে ব্যবহার করা নিষেধ।
অভিযুক্ত নান্টু চন্দ্র সরকার বলেন, ‘আমি বীজ ধানের কথা বলে কারও কাছে ধান বিক্রি করিনি। তবে অনেকের কাছে খাবারের জন্য প্রায় ২২-২৫ মণের মতো ধান ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য ফুল চান মিয়া জানান, নান্টুর কাছ থেকে নকল বীজ ধান কিনে কৃষকেরা প্রতারিত হয়েছেন। বিষয়টি উপজেলা কৃষি অফিসকে জানিয়েছি। শুনেছি গত বছরও নান্টুর কাছ থেকে পাটের বীজ কিনে এলাকার অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। বিষয়টি তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
বড়তলী-বানিহায়ারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মুখলেছুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, নান্টু এলাকার ২-৩ জন কৃষকের কাছে বীজধান বিক্রি করেছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘কৃষকদের প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে বীজ ধান কেনার আগে কৃষকেরা আমাদের অফিসের পরামর্শক্রমে যাচাই-বাছাই করে বীজ ধান কিনলে এমন প্রতারণার শিকার হতেন না।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি জানান, এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।