নেত্রকোনার চারটি হাওর উপজেলাসহ ৯টি উপজেলায় ১৩২টি বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। আগাম বন্যার কবল থেকে বোরো ধান রক্ষায় এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বাঁধ নির্মাণকাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বন্যার পানি আসার আগেই বাঁধ নির্মাণকাজ শেষ হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৩২টি পিআইসির (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) মাধ্যমে ৯টি উপজেলায় ১৬৫ কিলোমিটার ডুবন্ত বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এ জন্য বরাদ্দ ৩৫ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা পরবর্তী পর্যায়ে ছাড় করা হবে। এই বাঁধ আগাম বন্যার পানি আটকে দেবে এবং ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না।
খালিয়াজুরী নগর গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, হাওর এলাকায় বোরো আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়। আর আকস্মিকভাবে পাহাড়ি ঢল বা আগাম বৃষ্টি হলে হাওরে পানি এসে বোরো ফসল তলিয়ে যায়। কৃষকেরা পাকা ধান আর ঘরে তুলতে পারেন না। এ জন্য বাঁধ নির্মাণ খুব প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
একই এলাকার কৃষক প্রতুল সরকার বলেন, প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে আমাদেরকে ফসল ফলাতে হয়। কোনো বছর ফসল বাতাসে নষ্ট হয়। প্রকৃতির ওপর কারও হাত নেই। তবে ডুবন্ত বাঁধগুলো যদি সঠিক সময়ে দেওয়া যেত। দুর্যোগের একটা দিক থেকে অন্তত নিশ্চিত হওয়া যেত।
নেত্রকোনা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং জেলা পিআইসি কমিটির সদস্যসচিব এম এল সৈকত বলেন, ১৩২টি বাঁধের মধ্যে খালিয়াজুরী উপজেলাতেই ৬২টি বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া মদনে ২৩টি, মোহনগঞ্জে ১৪টি, কলমাকান্দায় ২০টি, বারহাট্টায় ৫টি, পূর্বধলায় ২টি, দুর্গাপুরে ১টি, আটপাড়ায় ২টি এবং কেন্দুয়ায় ৩টি বাঁধ নির্মিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যেখানে যেখানে বাঁধ নির্মাণ করা হবে এবং যার জমিতে পড়বে তাদের নিয়েই পিআইসি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখন দ্রুত গতিতে বাঁধ নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে এবং বন্যার পানি আসার আগেই বাঁধ নির্মাণকাজ শেষ হবে। নেত্রকোনার হাওর এলাকার পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, প্রতিবছরই ডুবে থাকা বাঁধগুলো সংস্কার করা হচ্ছে এবং কিছু বাঁধ নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে। এটা ভালো। কিন্তু কোন কোন এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা যায় কি না তা নিয়ে আমাদের বা কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক ও জেলা পিআইসি কমিটির সভাপতি কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, পিআইসি কমিটিগুলো এবার দ্রুত গঠন করা হয়েছে। কাজও শুরু করে দেওয়া হয়েছে। বাঁধ নির্মাণে কোনো প্রকার গাফিলতি যাতে না হয়, সে জন্য প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মনিটরিং করার ও দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া যথাসময়ে বাঁধগুলোর নির্মাণকাজ যেন শেষ হয় সে জন্য পিআইসি কমিটিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।