কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) ঘোষণা করেছে, তারা তুরস্কে অবস্থানরত সব বাহিনী প্রত্যাহার করে নিচ্ছে এবং এসব বাহিনীকে ইরাকের স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলে স্থানান্তর করা হচ্ছে। আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) এক ঘোষণায় সংগঠনটি জানায়, এই পদক্ষেপের লক্ষ্য আঙ্কারার সঙ্গে শান্তিপ্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশ করা।
আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ন্যাশনাল জানিয়েছে, পিকেকের কারাবন্দী নেতা আবদুল্লাহ ওজালানের গত মে মাসের আহ্বানের পর ধারাবাহিকতায় এ সিদ্ধান্ত এসেছে। ওজালান পিকেকেকে নিরস্ত্রীকরণ ও বিলুপ্তির পথে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এই অবস্থায় গত জুলাইয়ে ইরাকের উত্তরাঞ্চলে একটি প্রতীকী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অল্প কিছু পিকেকে যোদ্ধা অস্ত্র জমা দিয়ে তুর্কি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চার দশকের সশস্ত্র সংগ্রামের অবসান ঘোষণা করে। সংগঠনটি তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত।
আজ পিকেকের ফিরাত নিউজ এজেন্সি প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তুরস্কে অবস্থানরত সব যোদ্ধাকে মেদিয়া প্রতিরক্ষা অঞ্চলে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অঞ্চলটি মূলত উত্তর ইরাকের পাহাড়ি এলাকা। বিশেষ করে, কান্দিল পর্বতমালা ও এর আশপাশের অঞ্চল, যেখানে পিকেকের ঘাঁটি ও প্রধান কার্যালয় অবস্থিত।
কান্দিল পর্বতের পাদদেশে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ২৫ জন যোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন, যাঁরা তুরস্ক থেকে সেখানে পৌঁছান। তাঁরা বলেন, ‘আমরা আমাদের সব বাহিনী প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করছি।’
সংগঠনটি তুরস্কের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, শান্তিপ্রক্রিয়া রক্ষার জন্য যেন দ্রুত প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয় এবং সাবেক যোদ্ধাদের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করা হয়।
সিনিয়র পিকেকে নেতা সাবরি ওক সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই প্রক্রিয়াকে টেকসই করতে উল্লেখযোগ্য আইনি পদক্ষেপ প্রয়োজন। আমরা এমন আইন চাই, যা এই প্রক্রিয়ার উপযোগী। আমরা আশা করি, কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্ব পালন করবে।’
এ বিষয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের দল একে পার্টির মুখপাত্র ওমর শেলিক একটি এক্স বিবৃতিতে বলেছেন, পিকেকের প্রত্যাহার তুরস্কে সন্ত্রাসমুক্ত অগ্রগতির বাস্তব প্রতিফলন। তিনি আরও জানান, সংসদে গঠিত ৫১ সদস্যের কমিশন এই প্রক্রিয়ার আইনি ও রাজনৈতিক কাঠামো তৈরির কাজ করছে।
১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে ওজালানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত পিকেকে ১৯৮৪ সালে তুরস্কের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান শুরু করে। এ সংঘাতে গত চার দশকে ৪০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
কিন্তু চলতি বছরের মে মাসে ওজালানের আহ্বানে পিকেকে জানায়, তারা অস্ত্র নয়, বরং গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মাধ্যমে কুর্দি জনগণের অধিকার রক্ষার পথে এগিয়ে যাবে।
তুরস্কের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল পিপলস ইকুয়ালিটি অ্যান্ড ডেমোক্রেসি পার্টি—ডিইএম এই শান্তিপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তুর্কি গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, দলের একটি প্রতিনিধিদল শিগগির প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে এবং পরে ওজালানের সঙ্গে দেখা করতে ইমরালি দ্বীপের কারাগারে যাবে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তর ইরাকে ঘাঁটি গেড়েছে পিকেকে। অঞ্চলটিতে তাই তুরস্ক নিয়মিত সামরিক অভিযান পরিচালনা করে আসছে। তবে সময়ের ব্যবধানে সংগঠনটির লক্ষ্যও পরিবর্তিত হয়েছে। স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন থেকে সরে এসে তারা এখন কুর্দিদের জন্য অধিক অধিকার ও সীমিত স্বায়ত্তশাসনের দাবি তুলছে।
তুরস্ক বলেছে, দেশটি কুর্দিদের সাংস্কৃতিক ও নাগরিক অধিকার রক্ষা করে, তবে কোনোভাবেই বিচ্ছিন্নতাবাদ মেনে নেবে না।