রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কিশোর শিহাব আলী। বাইরে অপেক্ষমাণ স্বজনেরা প্রার্থনা করছেন, সুস্থ জীবনে যেন ফিরে আসে ছেলেটি। দুর্বৃত্তদের নির্মম হামলায় ১৭ বছরেই থেমে যেতে বসেছে শিহাবের জীবন।
চলতি বছর এসএসসি পাস করা শিহাবের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বসন্তপুর গ্রামে। বাবার নাম মিজানুর রহমান রিপন। রিপনের এক ছেলে এবং দুই মেয়ে; শিহাব সবার বড়। গত ২০ আগস্ট রাত ৮টার দিকে দুর্বৃত্তরা হঠাৎ করে শিহাবের ওপর হামলা চালায়। শিহাবের পুরো শরীরে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়; বিশেষত মাথার আঘাত গুরুতর হওয়ায় প্রচুর রক্তক্ষরণে তার অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে।
হামলার পর থেকেই শিহাব অচেতন ছিল; ইতিমধ্যে তার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, তবু শরীরের কোনো অঙ্গের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। আইসিইউর দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকেরা তাকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
শিহাবের বাবা রিপন জানান, রাতের অন্ধকারে পড়ে থাকা অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক শিহাবের অবস্থা দেখে দ্রুত রামেক হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে শিহাবকে রামেক হাসপাতালের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২১ তারিখে তাকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ২২ তারিখে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয় এবং অস্ত্রোপচার করা হয়। এখনো সে আইসিইউতে।
রামেক হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা গোলাম মোস্তফার ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কে বিশ্বাস জানান, ‘আহত শিহাবের ব্যাপারে আমার সরাসরি জানা নেই; তবে শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত খোঁজখবর নিয়ে দেখব।’
স্বজনেরা জানান, ২০ অক্টোবর সন্ধ্যায় বসন্তপুরে বাবার ফলের দোকান বন্ধ করে শিহাব তার পরিচিত তারেক ও হাবিবকে নিয়ে পাশের বান্দুড়িয়া এলাকায় যায়। তেঁতুলতলা এলাকার বাঁকের কাছে পৌঁছালে হঠাৎ এক ব্যক্তি তাদের পথরোধ করে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আট থেকে দশ ব্যক্তি টর্চ ও লাঠি নিয়ে এগিয়ে আসে। শিহাব মোটরসাইকেল থেকে নেমে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করলেও সঙ্গীর দুটি মোটরসাইকেল দ্রুত পালিয়ে যায়। শিহাব মাঠে দৌড়াতে গিয়ে দিক হারিয়ে একটি পুকুরে ঝাঁপ দেয়; দুর্বৃত্তরাও পুকুরে নেমে তাকে ধরে পেটানো শুরু করে। পরে তাকে পুকুর থেকে তুলে লাঠি দিয়ে আরও বেধড়ক মারধর করা হয়।
শিহাব তার ফোন বের করে সাহায্যের জন্য কল করার চেষ্টা করে; কিন্তু দুর্বৃত্তরা ফোন ছিনিয়ে নিয়ে আবার মারধর করে। একপর্যায়ে শিহাব অচেতন হয়ে মাটিতে পড়ে যায়; এরপর লাঠি দিয়ে তাকে আরও পেটানো হয়। অবশেষে দুর্বৃত্তরা তাকে ফেলে রেখে চলে যায়। স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে এসে তাকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান এবং পরিচিতজনদের জানিয়ে দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়।
শিহাবের খালাতো ভাই মাসুদ রানা বলেন, ‘শিহাবকে যে রকমভাবে কুপিয়েছে, সেটা অমানবিক। আমরা চাই, হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।’ পরিবারের সদস্যরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, ছেলেটি কি বেঁচে থাকবে না, তাঁরা সে নিয়েই চিন্তিত। তাঁরা হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও করেছেন।
এ ঘটনায় শিহাবের বাবা রিপন ২৪ অক্টোবর রাতে নয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও আট থেকে নয়জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে গোদাগাড়ী থানায় মামলা করেছেন। মামলার আসামিরা হলেন রতন আলী (৩২), মো. কানন (২২), সুজন আলী (৩২), ইয়ার উদ্দীন (৩২), মো. শরীফ (৩৫), মো. রাব্বি (২৫), মো. হালিম (৩০) এবং মো. কলিম (৩২)। তারা সবাই বান্দুড়িয়া এলাকার বাসিন্দা।
এ বিষয়ে গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘মামলা করা হয়েছে। ছেলেটির শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক; আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। মামলা করার পরই আসামিদের ধরার জন্য অভিযান শুরু করেছি। আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব।’