চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের খসড়া আচরণবিধি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের আয়োজনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা সভায় হট্টগোল হয়েছে। সভায় প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ এনে সভা বর্জন করেছেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
আজ বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা হয়।
সভার শুরুতে নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. আমির মুহাম্মদ নসরুল্লাহ নির্বাচনের জন্য খসড়া আচরণবিধি পড়ে শোনান। পরে শিক্ষার্থীরা আচরণবিধি নিয়ে নানান প্রশ্ন করলে কমিশন তার উত্তর দিতে থাকে। কিন্তু কথা বলার সুযোগ না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরনের উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়।
পরে সভার শেষ পর্যায়ে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা সভা বয়কট করে চলে যান।
বয়কটের বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়ার জন্য মতবিনিময় সভার আয়োজন করে, অথচ এখানে শিক্ষার্থীদের কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তারা ধরাবাঁধা নিয়ম করে দিয়েছে। যে কয়েকজন কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন, তাঁদের একের অধিক প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাঁরা অতীত প্রশাসনের মতো শিক্ষার্থীদের কণ্ঠরোধ করতে চেয়েছে। একচেটিয়াভাবে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাঁদের কথা বলার, জবাদিহিতা নেওয়া এবং প্রশ্ন করার সুযোগ না পাওয়ায় আমরা ছাত্রদল মতবিনিময় সভা বয়কট করেছি।’
এর আগে গতকাল বুধবার শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের দলকানা প্রশাসনের অধীনে কতটুকু লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, আমরা যথেষ্ট সন্দিহান এবং এই দলকানা প্রশাসনের অধীনে নির্বাচনে যাব কিনা তা এখন ভেবে দেখার বিষয়।’
তবে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষার্থী থেকে জানা যায়, নির্বাচন কমিশন মূলত যাতে হট্টগোল বা কোনো ধরনের ঝামেলা না হয়, এ জন্য লিখিত বক্তব্য দিতে বলে। অনেকে কয়েকটি করে প্রশ্ন করেছেন। একটার বেশি প্রশ্ন করতে না দেওয়ার বিষয়টি বানোয়াট। আর ছাত্রদল সভা বয়কট করেছে শুরুর দুই ঘণ্টা পর, বলা যায় শেষের দিকে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে বদ্ধপরিকর। আজকে দুই ঘণ্টা আলোচনা হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের বলা হয়, এখানে তো অনেক বয়স্ক স্যারেরা আছেন, আমরা আজকের মতো শেষ করি, পরে আবারও বসতে পারো। যেহেতু এটা চূড়ান্ত না। প্রার্থী তালিকা দেওয়ার পর তাদের সঙ্গেও বসে সিদ্ধান্ত নেব। এরপর এটা চূড়ান্ত হবে। আর যে সংগঠনটি অভিযোগ করেছে, তাদের অনেকেই কথা বলেছে, দুই ঘণ্টা পর তারা এটি বয়কট করেছে। আমরা তো বলেছি, এটা চূড়ান্ত না। আমাদের দরজা সব সময় খোলা, শিক্ষার্থীরা তাদের যেকোনো ধরনের অভিযোগ আমাদের জানাতে পারবে। আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে সেগুলো সমাধান করব। আমরা নির্বাচন করতে চাই। এটা কেউ ষড়যন্ত্র করে বন্ধ করতে পারবে না।’
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন, সদস্য অধ্যাপক ড. বেগম ইসমত আরা হক, অধ্যাপক ড. আমির মুহাম্মদ নসরুল্লাহ, ড. মো. আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ ও অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান চৌধুরী।