Ajker Patrika

নিজের অবস্থান নিয়ে দ্বন্দ্বে জাতীয় পার্টি

রেজা করিম, ঢাকা
নিজের অবস্থান নিয়ে দ্বন্দ্বে জাতীয় পার্টি

জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ২০১৯ সালের এই দিনে মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে জাপার ভেতরে-বাইরে অনেকে সন্দিহান ছিলেন। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দলের নাটাই শক্ত হাতেই ধরেছেন তাঁর ছোট ভাই জি এম কাদের। তাঁর নেতৃত্ব ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে দল নিয়ে নতুন এক প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে। তবে, সেই প্রত্যাশা তিনি কতটুকু পূরণ করতে পারবেন–নানা কারণে সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর নবম কাউন্সিলে তিন বছরের জন্য জাপার চেয়ারম্যান হন জি এম কাদের। এরই মধ্যে তিনি দেড় বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর গুঞ্জন শুরু হয়–এরশাদ নিজে যা করতে পারেননি, জি এম কাদের কি সেটি পারবেন?

পার্টির দায়িত্বশীলরা বলছেন, রওশন বলয়ের তিন নেতা–আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়া উদ্দীন আহমেদ বাবলু ও ফখরুল ইমামের কর্মকাণ্ডে দল নানাভাবে বিব্রত হয়েছে। এরশাদ বেঁচে থাকতে বিষয়গুলো বুঝলেও নিজের দুর্বলতা আর দলের কথা চিন্তা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেননি। জি এম কাদের তাঁদের আস্থায় আনতে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেন। বাবলুকে করেন দলের মহাসচিব, ফখরুলকে অতিরিক্ত মহাসচিব। আর আনিসুল ইসলামকে করেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান। এই তিন নেতা এখন জি এম কাদেরের বিরোধিতা করা ভুলে গেছেন। তবে, তাঁদের অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে দলের অনেকের মধ্যে তাঁদের ঘিরে সংশয়-সন্দেহ রয়েছে। সংশয়ের বিষয়টি তাঁরা নিজেরাও অনুভব করেন।

জাপার মহাসচিব জিয়া উদ্দীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাঁর (জিএম কাদের) গতিশীল নেতৃত্বে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। সরকারের বিকল্প শক্তি হিসেবে জাতীয় পার্টি যে নেতৃত্ব দিতে পারে, এখন সে বিষয়টি জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।’

দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। দলীয় কর্মকাণ্ডে তেমন সক্রিয় নন। তাঁর সমর্থক অনেক বড় নেতা এখন দলে কোণঠাসা। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাপার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, সুনীল শুভ রায়, ফয়সল চিশতি প্রমুখ। চেয়ারম্যানের প্রতি নাখোশ থাকলেও তাঁরা কোনোভাবেই সেটা প্রকাশ করতে চান না।

এরশাদের অবর্তমানে দল কেমন চলছে–জানতে চাইলে জাপার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘সুযোগ যদি আসে কথা বলার, কথা বলার অধিকার পাই, তখন বলব।’

দল গোছাতে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জাপার বর্তমান চেয়ারম্যান। সভাপতিমণ্ডলীর অনেক সদস্যকে দল থেকেই বহিষ্কার করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার রওশনপন্থী এক নেতা বলেন, পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শতচেষ্টা করেও যে কাজটা করতে পারেননি, সে কাজটাই করে চলেছেন জি এম কাদের। তিনি অনেক কঠিন সমস্যা এরই মধ্যে সমাধান করেছেন। তাঁর কৌশল আর নেতৃত্বগুণের সঙ্গে বিরোধী পক্ষ পেরে উঠছে না।

দলের রওশন বলয়ের নেতারা কোণঠাসা হলেও সরকারঘেঁষা নেতাদের কর্মকাণ্ডে চিন্তিত দল। গৃহপালিত বিরোধী দলের তকমা পাওয়া দলটি ভীষণ বিব্রত। বিষয়টি জি এম কাদেরেরও মাথাব্যথার কারণ বলে মনে করেন দলের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, সরকারের দালালি করতে করতে দলের অনেক সাংসদ নিজের শিকড়ই ভুলতে বসেছেন। দলঘোষিত কর্মসূচি পালনে তাদের অনীহা থাকলেও সরকারকে তুষ্ট করতে বিভিন্ন সময়ে নানা আয়োজন করেছেন তাঁরা। এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচি পালনেও তেমন আগ্রহ নেই তাঁদের।

এ প্রসঙ্গে জাপার মহাসচিব বলেন, ‘একটা বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে তো সময় লাগবে। সরকারের দালালি করলে কোনো বিরোধী দলই টিকবে না। স্বকীয়তা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। জনগণের সমস্যা সমাধানে রাজনীতি করতে হবে। সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরতে হবে।’

সার্বিক বিষয়ে জাপার চেয়ারম্যান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উনি (এরশাদ) যে রাজনৈতিক দল রেখে গেছেন, তাঁর সঙ্গে কিছু স্বপ্ন ও অর্ধসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জাতীয় পার্টিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...