Ajker Patrika

কোরআন তিলাওয়াত মুমিনের হৃদয়ে আনে প্রশান্তি

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কোরআন নুর, আলো এবং এক চিরন্তন মুজিজা। এটি কেবল একটি কিতাব নয়, বরং মুমিন হৃদয়ের জন্য পরম শান্তি ও প্রশান্তির উৎস। কোরআন পাঠ করা মুমিনদের জন্য এক অফুরন্ত কল্যাণের পথ।

আল্লাহর কিতাব পাঠ ও সে অনুযায়ী আমল করা দুনিয়ার সব ব্যবসার চেয়ে বহুগুণে উত্তম ও নিরাপদ। এই ব্যবসায় কোনো ক্ষতি নেই, আছে শুধু লাভ আর লাভ, যা আমাদের আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, নামাজ কায়েম করে, আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করতে পারে, তাদের এমন ব্যবসায়ের, যার ক্ষয় নেই। এ জন্য যে আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদের আরও বেশি দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী।’ (সুরা ফাতির: ২৯-৩০)

আল্লাহর প্রিয় বান্দারা সব সময় এই লাভজনক ব্যবসার সন্ধানে রত ছিলেন। এই ব্যবসার প্রতি আহ্বান জানিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান দেব—যা তোমাদের রক্ষা করবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে?’ (সুরা সাফ: ১০)

যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়নে রত থাকে, ইমানের সঙ্গে তা পাঠ করে, নামাজ কায়েম করে এবং নেক আমল করে, আল্লাহ পরকালে তাদের কর্মের প্রতিদান তাদের কল্পনার চেয়েও বহুগুণ বেশি দেবেন। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও দয়াময়।

কোরআন পাঠকারী মুমিনদের জন্য মহান আল্লাহ বহু মর্যাদা ও পুরস্কারের ব্যবস্থা রেখেছেন:

  • ক. আল্লাহর পরিবারভুক্ত হওয়া: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কয়েকজন আল্লাহর পরিবার-পরিজন।’ সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ, তারা কারা?’ তিনি বললেন, ‘কোরআন তিলাওয়াতকারীরাই আল্লাহর পরিবার-পরিজন এবং তাঁর বিশেষ বান্দা।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২১৯)
  • খ. প্রতি হরফে ১০ নেকি লাভ: আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পাঠ করবে, সে একটি নেকি লাভ করবে। আর প্রতিটি নেকিকেই ১০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আমি বলি না যে, আলিফ লাম মিম মিলে একটি হরফ, বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মিম আরও একটি হরফ।’ (জামে তিরমিজি: ২৯১০)
  • গ. কোরআন পাঠকারীর দৃষ্টান্ত: আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোরআন পাঠকারী মুমিনের দৃষ্টান্ত মিষ্টি কমলার ন্যায়, যার ঘ্রাণ উত্তম, স্বাদও উত্তম।...’ (সহিহ্ বুখারি: ৫৪২৭)
  • ঘ. কিয়ামতের দিনে উচ্চ মর্যাদা: কিয়ামতের দিন কোরআনের পাঠককে বলা হবে—‘তুমি তা পাঠ করতে থাকো এবং ওপরে চড়তে (উঠতে) থাকো। তুমি তাকে ধীরেসুস্থে পাঠ করতে থাক, যেরূপ তুমি দুনিয়াতে পাঠ করতে। কেননা, তোমার সর্বশেষ বসবাসের স্থান (জান্নাত) ওটিই, যেখানে তোমার কোরআনের আয়াত শেষ হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৪৬৪)
  • ঙ. কোরআন সুপারিশকারী: আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন, ‘কোরআন এমন সুপারিশকারী, যার সুপারিশ (তিলাওয়াতকারীর পক্ষে) কবুল করা হবে। এমন বিতর্ককারী, যার বিতর্ক (তিলাওয়াতকারীর পক্ষে) গ্রহণ করা হবে। অতএব, যে কোরআনকে সামনে রাখবে (তিলাওয়াত করবে ও তদনুযায়ী আমল করবে), কোরআন তাঁকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে। আর যে পেছনে রাখবে (তিলাওয়াত করবে না ও তদনুযায়ী আমল করবে না), কোরআন তাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে।’ (সহিহ্ ইবনে হিব্বান: ১২৪)
  • চ. কোরআন শেখা ও শেখানো: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মাঝে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে কোরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।’ (জামে তিরমিজি: ২৯০৯)
  • ছ. মর্যাদা বৃদ্ধি ও সম্মান: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ এ কিতাবের মাধ্যমে কয়েক গোত্রকে উচ্চ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করবেন আর কয়েককে এর দ্বারা অবনমিত করবেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২১৮)

উহুদের শহীদদের দাফনের ক্ষেত্রেও নবীজি (সা.) তাদের মধ্য থেকে কোরআন সম্পর্কে অধিক জ্ঞান রাখতেন এমন ব্যক্তিকে কবরে আগে রাখতেন। এটি কোরআন পাঠকারীর মর্যাদারই প্রমাণ।

কোরআন পাঠ করা, এর অর্থ বোঝা এবং তদনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা আমাদের জন্য সর্বোত্তম ব্যবসা এবং মুক্তি লাভের একমাত্র পথ। আসুন, আমরা বেশি বেশি করে কোরআন পাঠ করি এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার পথে অগ্রসর হই।

লেখক: মাওলানা সাইফুল ইসলাম সালেহী, ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ