Ajker Patrika

গর্ভবতী ছিলেন ট্রাম্পের স্ত্রী, বাজিতে হেরে ১০ হাজার ডলারের শিশুখাদ্য পাঠান এপস্টেইন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ২৪
জর্জিয়ায় জন্ম নেওয়া অভিনেত্রী ও গায়িকা মারলা ম্যাপলস ১৯৯৩ সালের অক্টোবরে ট্রাম্পের কন্যা টিফানির জন্ম দেন। ছবি: এএফপি
জর্জিয়ায় জন্ম নেওয়া অভিনেত্রী ও গায়িকা মারলা ম্যাপলস ১৯৯৩ সালের অক্টোবরে ট্রাম্পের কন্যা টিফানির জন্ম দেন। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনের সম্পৃক্ততার আরও কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের তত্ত্বাবধায়ক কমিটি (হাউস ওভারসাইট কমিটি) এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। এপস্টেইন ফাইলসংশ্লিষ্ট এসব নথিতে দেখা গেছে, বহুবার বহুভাবে ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

সর্বশেষ পাওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাজিতে হেরে ১০ হাজার ডলার মূল্যের শিশুখাদ্যে ভরা একটি ট্রাক পাঠিয়েছিলেন জেফরি এপস্টেইন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দি ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন লেখক দীপক চোপড়ার সঙ্গে ই-মেইল বিনিময়ে এপস্টেইন এই বাজির কথা জানান। তখন ট্রাম্পের প্রথম নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস বাকি। চোপড়া ২৯ জুলাই এপস্টেইনকে ই-মেইল করে ফেসটাইম বা স্কাইপে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি মারলা ম্যাপলসকে চেনেন?’

তিন মিনিট পর এপস্টেইন জবাব দেন, ‘হ্যাঁ, চিনি।’ এরপরই তিনি লেখেন, ‘যখন মারলা ডোনাল্ডকে জানালেন যে তিনি অন্তঃসত্ত্বা...তখন আমি ১০ হাজার ডলারের বাজিতে হেরে যাই এবং তাঁকে শিশুখাদ্যে ভরা একটা ট্রাক পাঠাই।’

এপস্টেইন আরও জানান, সেই ঘটনার পর থেকে আর ম্যাপলসের সঙ্গে তাঁর কথা হয়নি।

জর্জিয়ায় জন্ম নেওয়া অভিনেত্রী ও গায়িকা মারলা ম্যাপলস ১৯৯৩ সালের অক্টোবরে ট্রাম্পের কন্যা টিফানির জন্ম দেন। এর কিছুদিন আগেই ট্রাম্প তাঁর প্রথম স্ত্রী ইভানাকে তালাক দেন। কয়েক মাস পর নিউইয়র্কের প্লাজা হোটেলে ম্যাপলস-ট্রাম্প বিয়ে করেন। সিএনএনের আর্কাইভ ফুটেজ অনুযায়ী, বিয়ের অনুষ্ঠানের অতিথির তালিকায় জেফরি এপস্টেইনও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে ম্যাপলস-ট্রাম্পের বিচ্ছেদ হয়।

ম্যাপলস ও চোপড়ার পূর্বপরিচয়ের তথ্যও জানা গেছে। ২০১০ সালে ‘সেজেস অ্যান্ড সায়েন্সেস সিম্পোজিয়াম’-এ তাঁরা একসঙ্গে বক্তব্য দেন এবং ২০১৬ সালে ম্যাপলস চোপড়ার সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে তাঁকে ‘বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেন।

ট্রাম্পকে নিয়ে এসব ই-মেইল প্রসঙ্গে দীপক চোপড়া দি ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, ‘চিকিৎসক-রোগীর গোপনীয়তার মতোই এসব বিষয় নিয়ে আমি সব সময় সতর্ক। তবে চলমান তদন্ত সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়ে সত্য বেরিয়ে আসুক—এটাই আশা করি। আমি যা জানি, সেটা অনুমোদিত কর্মকর্তাদের জানাতে প্রস্তুত। নইলে প্রেক্ষাপট না জেনে কেবল অনুমানই চলতে থাকবে।’

এর আগে গত বুধবার হাউস ওভারসাইট কমিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে আরও কিছু ই-মেইল প্রকাশ করে। এতে এপস্টেইন, তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ঘিসলেন ম্যাক্সওয়েল ও লেখক মাইকেল উলফের মধ্যে আদান-প্রদান করা বার্তা ছিল। কয়েকটি ই-মেইলে এপস্টেইনকে বারবার ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করতে দেখা গেছে।

২০১১ সালের এপ্রিল মাসে লেখা একটি ই-মেইলে এপস্টেইন লিখেছিলেন, ‘আমি চাই তুমি বোঝো, যে কুকুরটা এখনো ঘেউ ঘেউ করেনি, সে হচ্ছে ট্রাম্প।’ এরপর তিনি (নাম অপ্রকাশিত) লেখেন, ‘একটি মেয়ে তার (ট্রাম্পের) সঙ্গে আমার বাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটিয়েছে। কিন্তু সে (ট্রাম্প) তার নাম একবারও প্রকাশ করেনি।’ এর জবাবে ম্যাক্সওয়েল লিখেছিলেন, ‘আমি আসলে এটা নিয়েই ভাবছিলাম...।’

এদিকে নতুন এই ই-মেইলগুলো প্রকাশের পর ট্রাম্প–এপস্টেইন সম্পর্ক নিয়ে আবারও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

তবে এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এপস্টেইন বা ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনেনি মার্কিন কর্তৃপক্ষ।

এদিকে কিছুদিন আগে মামলাটির কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। তাদের দাবি, এই মামলার বিষয়ে আর কোনো তথ্য প্রকাশ করার নেই। কিন্তু এর ঠিক চার মাস পর এই নতুন তথ্য সামনে এল।

ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন, এপস্টেইনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা ছিল না। ১৯৯০-এর দশক থেকে ২০০০-এর শুরুর দিকে তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল, তবে ২০০৪ সালের দিকে তাঁদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০-এর দশকে অন্তত সাতবার এপস্টেইনের বিমানে ভ্রমণ করেছেন ট্রাম্প। গত জুলাইয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৩ সালে এপস্টেইনের ৫০তম জন্মদিন উপলক্ষে একটি অশ্লীল চিঠি পাঠিয়েছিলেন ট্রাম্প—যেখানে ছিল হাতে আঁকা একজন নগ্ন নারীর ছবি ও কিছু কৌতুকপূর্ণ বার্তা।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিঠিটি ছিল জন্মদিনের একটি ‘বিশেষ’ অ্যালবামের অংশ। এপস্টেইনের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর সাবেক সঙ্গী ঘিসলেন ম্যাক্সওয়েল এটি তৈরি করেছিলেন। চিঠিটিতে ট্রাম্পের নামসহ টাইপরাইটারে লেখা একটি কথোপকথন রয়েছে। একজন নগ্ন নারীর অবয়বে চিঠিটি বাঁধাই করা ছিল। ওই নারীর স্তন, যৌনাঙ্গসহ স্পর্শকাতর অংশে ‘ডোনাল্ড’ স্বাক্ষরও ছিল।

চিঠির শেষ লাইনে এপস্টেইনের উদ্দেশে লেখা ছিল, ‘শুভ জন্মদিন—প্রতিটি দিন হোক আরও একটি চমৎকার গোপন রহস্য।’ তবে ট্রাম্প চিঠিটি ‘নকল’ বলে দাবি করেন এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

নতুন এসব ই-মেইলের বিষয়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট বলেন,‘বিরক্তিকর আচরণের জন্য এক দশকেরও আগে এপস্টেইনকে মার-এ-লাগো থেকে বের করে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এর আগে ২০১৯ সালে ট্রাম্পও বলেছিলেন, এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ‘অনেক আগেই’ শেষ হয়ে গেছে।

তবে নতুন প্রকাশিত এসব ই-মেইলে দেখা গেছে, এপস্টেইন দাবি করছেন, তিনি ‘কখনো’ মার-এ-লাগোর সদস্য ছিলেন না।

এদিকে, গত বুধবার হাউস ডিসচার্জ পিটিশনের চূড়ান্ত ভোট সম্পন্ন হয়েছে। এখন এপস্টেইনের সব নথি প্রকাশে কংগ্রেসের পূর্ণাঙ্গ ভোট বাধ্যতামূলক করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জলবায়ু সম্মেলনের প্রবেশপথ আটকে আদিবাসীরা বললেন—কেউ ঢুকবে না, কেউ বেরোবে না

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কপ ৩০ সম্মেলনের প্রবেশপথে বিক্ষোভকারী আদিবাসীদের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত
কপ ৩০ সম্মেলনের প্রবেশপথে বিক্ষোভকারী আদিবাসীদের একাংশ। ছবি: সংগৃহীত

ব্রাজিলে আমাজন বনের কিনারায় আয়োজিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন ‘কপ-৩০’ এর মূল প্রবেশপথ আটকে দিয়েছেন একদল আদিবাসী বিক্ষোভকারী। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে সম্মেলনের পঞ্চম দিনের বৈঠক শুরুর প্রাক্কালে প্রবেশ পথ আটকে দিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে অবরোধ গড়ে তোলেন আদিবাসীরা। এ সময় তাঁরা ‘কেউ ঢুকবে না, কেউ বেরোবে না’ স্লোগানে মানবশৃঙ্খল তৈরি করে মূল গেট আটকে রাখেন।

এ সময় ব্রাজিলের সামরিক বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও কোনো ধরনের শারীরিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগই ঐতিহ্যবাহী আদিবাসী পোশাক পরিহিত ছিলেন। আর আদিবাসীদের মানবশৃঙ্খলের বাইরে আরও একটি স্তর তৈরি করে অন্যান্য পরিবেশবাদী গোষ্ঠীর কর্মীরা তাঁদের সমর্থন জানান।

গত চার দিনের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো কপ ৩০–এর কর্মসূচি ব্যাহত করলেন আদিবাসীরা, যদিও আয়োজকেরা এবারের সম্মেলনটিকে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও উদ্‌যাপনের সমাবেশ হিসেবে তুলে ধরছেন।

জানা গেছে, এই ধরনের বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছে মুন্দুরুকু নামে একটি আদিবাসী গোষ্ঠী। তাঁরা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার সঙ্গে বৈঠকের দাবি জানিয়েছেন। একটি লিখিত বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট লুলা, আমরা কপ–এর সামনে এসেছি, কারণ আমরা চাই—আপনি আমাদের কথা শুনুন। কৃষি ব্যবসার স্বার্থে আমরা আমাদের বিসর্জন দিতে রাজি নই। আমাদের বন বিক্রির জন্য নয়। আমরা জলবায়ুর রক্ষক, বড় বড় কোম্পানির লাভের জন্য আমাজনকে আর ধ্বংস করা যাবে না।’

মুন্দুরুকু নেতারা ব্রাজিল সরকারের প্রতি বেশ কিছু দাবি উপস্থাপন করেছেন। এসব দাবির মধ্যে ছিল—নদীগুলোকে বাণিজ্যিকভাবে উন্নয়নের পরিকল্পনা বাতিল, বন নিধন নিয়ে আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও চালু হওয়া শস্যবাহী রেল প্রকল্প স্থগিত, আদিবাসী ভূখণ্ডের সুস্পষ্ট সীমারেখা নির্ধারণ এবং বন উজাড় থেকে প্রাপ্ত কার্বন ক্রেডিট প্রত্যাখ্যান।

আদিবাসী অবরোধের মুখে সম্মেলনের অংশগ্রহণকারীদের শেষ পর্যন্ত একটি বিকল্প প্রবেশপথ দিয়ে ভেতরে ঢোকার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় জাতিসংঘের কর্মীরা দ্রুত ধাতব ডিটেক্টর সরিয়ে বিকল্প প্রবেশপথ তৈরি করেন।

স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বিক্ষোভটি শুরু হলে সম্মেলনের সভাপতি ও অভিজ্ঞ ব্রাজিলিয়ান কূটনীতিক আন্দ্রে করেয়া দু লাগো আলোচনা করার জন্য বিক্ষোভকারীদের সামনে যান। আলাপ চলাকালে তিনি এক আদিবাসী নারীর শিশুকে কোলে নেন এবং তাঁদের সঙ্গে শান্তভাবে কথা বলেন। তাঁর কথায় বিক্ষোভকারীরা শান্ত হলে সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে প্রবেশপথ থেকে তাঁরা সরে যান।

জাতিসংঘের জলবায়ু সংস্থা জানিয়েছে, এটি ছিল একটি ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ’। কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি ছিল না। তবে অভিজ্ঞ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী হার্জিত সিং বলেছেন, ‘৩৩ বছরে কপ আলোচনায় তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় আদিবাসীরা স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছেন—জলবায়ু ও জীববৈচিত্র্যের প্রকৃত রক্ষক তারাই।’

এর আগে গত মঙ্গলবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন রাতে আরেকটি ঘটনায় আদিবাসী বিক্ষোভকারীরা প্রধান ভেন্যুর দরজায় হঠাৎ ধাক্কা দিলে দুজন নিরাপত্তারক্ষী আহত হয়েছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

১ লাখ ২০ হাজার গ্লাইড বোমা বানাচ্ছে রাশিয়া, দাবি ইউক্রেনের শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গ্লাইড বোমার কার্যকর পাল্লা ছিল সর্বোচ্চ ৯০ কিলোমিটার। ছবি: এএফপির সৌজন্যে
গ্লাইড বোমার কার্যকর পাল্লা ছিল সর্বোচ্চ ৯০ কিলোমিটার। ছবি: এএফপির সৌজন্যে

রাশিয়া চলতি বছরে অন্তত ১ লাখ ২০ হাজার বিধ্বংসী গ্লাইড বোমা তৈরি করার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার এক শীর্ষ কর্মকর্তা। এর মধ্যে অন্তত ৫০০টি থাকবে নতুন প্রযুক্তির দূরপাল্লার গ্লাইড বোমা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ শুরুর পর থেকে রাশিয়া অস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে। দেশটির প্রতিরক্ষা কারখানাগুলো এখন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে। তবে সামরিক উৎপাদনের বিস্তারিত তথ্য মস্কো গোপন রাখে। এ জন্য রয়টার্স রাশিয়ার ২০২৫ সালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা যাচাই করতে পারেনি।

ইউক্রেনের ডেপুটি ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্সের প্রধান মেজর জেনারেল ভাদিম স্কিবিৎসকির দেওয়া এ তথ্য এসেছে একটি সাক্ষাৎকার থেকে। তিনি সংখ্যাটি কীভাবে পেলেন বা আগের উৎপাদন হার কত ছিল—তা জানাতে চাননি। তবে তাঁর মতে, গ্লাইড বোমা তৈরির ক্ষেত্রে এটি এখন পর্যন্ত রাশিয়ার সবচেয়ে বড় উদ্যোগ।

স্কিবিৎসকির ভাষ্য অনুযায়ী, ১ লাখ ২০ হাজারের এই হিসাবের মধ্যে থাকবে সম্পূর্ণ নতুন বোমা এবং পুরোনো বোমাগুলোকে গ্লাইড বোমায় রূপান্তর করে আপগ্রেড করার প্রক্রিয়া।

স্কিবিৎসকি জানান, রুশ বাহিনী প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০টি গ্লাইড বোমা নিক্ষেপ করছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে এই গড় ছিল দিনে প্রায় ১৭০টি।

স্কিবিৎসকি বলেন, ‘এসব বোমা গুলি করে নামানো সম্ভব, কিন্তু রাশিয়ার তৈরি বোমার সংখ্যা এত বেশি যে, তাদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়াই অসম্ভব। তাই এ হুমকি মোকাবিলায় আমাদের যথাযথভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।’

আগে এসব গ্লাইড বোমার কার্যকর পাল্লা ধরা হতো সর্বোচ্চ ৯০ কিলোমিটার। ফলে রুশ পাইলটেরা সীমান্ত অতিক্রম না করেও নিরাপদে বোমা ফেলতে পারতেন। কারণ, বিমান সীমান্তের ওপারে গেলে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সেগুলো ভূপাতিত করে দিতে পারে। তাই এ বোমা রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

গ্লাইড বোমা সাধারণ ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় অনেক সস্তা এবং বিপুল পরিমাণে তৈরি করা যায়। কয়েক শ কেজি বিস্ফোরক বহন করতে পারায় এগুলো বড় ভবনসহ সেনাঘাঁটিও ধ্বংস করতে সক্ষম। খারকিভ ও খেরসনের মতো ফ্রন্টলাইন শহরগুলোতে এসব বোমা দিয়েই ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে রাশিয়া।

স্কিবিৎসকি বলেন, রাশিয়া এবার নতুন একধরনের গ্লাইড বোমা তৈরি করছে, যা যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষেপের পর ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়ে যেতে পারবে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এমন ৫০০টির বেশি বোমা তৈরির পরিকল্পনা করেছে রাশিয়া।

ইউক্রেনের ধারণা, রাশিয়া এই বোমাগুলোর পাল্লা ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এটা করতে পারলে রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াই ইউক্রেনের বহু শহর টার্গেট করতে পারবে।

এ বিষয়ে জানতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু তারা তাৎক্ষিণকভাবে সাড়া দেয়নি।

রাশিয়া দাবি করে, তারা বেসামরিকদের লক্ষ্য করে না। তবে ইউক্রেনে আক্রমণের শুরু থেকে হাজারো মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে। মস্কো যুক্তি দেয়, ইউক্রেনের পশ্চিমাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়া রাশিয়ার জন্য হুমকি, যা ঠেকানো জরুরি।

স্কিবিৎসকি রাশিয়ার ড্রোন উৎপাদন সম্পর্কেও নতুন তথ্য দেন। তাঁর মতে, ড্রোন উৎপাদন বাড়ার ফলে রাশিয়া ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে আরও কার্যকরভাবে হামলা চালাতে পারছে।

স্কিবিৎসকি জানান, ২০২৫ সালে রাশিয়া ৭০ হাজার দূরপাল্লার ড্রোন তৈরি করবে। এর মধ্যে ৩০ হাজার হবে শাহেদ ড্রোন, যা রাশিয়ার হামলার মূল বাহন।

স্কিবিৎসকি জানান, তারা মাসে ৩০টি ড্রোন দিয়ে শুরু করেছিল, এখন ৩০টি ড্রোন একসঙ্গে একটিমাত্র লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। তাঁর মতে, এই শীতেও ইউক্রেনের গ্যাস ও জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা বাড়তে থাকবে।

স্কিবিৎসকি আরও বলেন, বর্তমানে যে পোক্রোভস্ক শহরে তীব্র লড়াই চলছে, সেটি রুশ বাহিনী দখল করতে পারলে তারা দোনেৎস্কের দিকে অগ্রসর হতে পারে। এটাই তাদের দীর্ঘদিনের লক্ষ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাতে মাত্র ২ ঘণ্টা ঘুমান জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী, ভোর ৩টায় ডাকেন বৈঠক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ২৪
জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানে তাকাইচি। ছবি: বিবিসি
জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানে তাকাইচি। ছবি: বিবিসি

জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানে তাকাইচি জানিয়েছেন, প্রতিরাতে তিনি গড়ে মাত্র দুই ঘণ্টা ঘুমান এবং অনেক সময় উপদেষ্টাদের ভোর ৩টায় বৈঠকে ডাকেন। তবে এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর জাপান জুড়ে আবারও আলোচনায় এসেছে দেশটির অতিরিক্ত কর্মচাপ, ক্লান্তি এবং অতিরিক্ত কাজের কারণে মৃত্যুর দীর্ঘদিনের সমস্যা।

শুক্রবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, গত সপ্তাহে টোকিওতে ভোররাতের এক বৈঠক নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন তাকাইচি। ‘ভোর তিনটার স্টাডি সেশন’ নামে সেই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় বাজেট কমিটির শুনানির মাত্র ছয় ঘণ্টা আগে।

সংসদীয় কমিটির এক শুনানিতে তাকাইচি নিজেই বলেছেন, ‘এখন আমি প্রায় দুই ঘণ্টা ঘুমাই, কখনো কখনো বড়জোর চার ঘণ্টা। এতে ত্বকেরও ক্ষতি হচ্ছে বোধ হয়।’ তাকাইচির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, জাপানের দীর্ঘ কর্মঘণ্টার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে তিনি কী পদক্ষেপ নেবেন। সেই প্রশ্নের জবাবেই তিনি এমন কথা বলেন।

তবে এই বিষয়ে সাধারণ মানুষ এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর এমন আচরণ দেশের অতিমাত্রায় কর্মনির্ভর করপোরেট সংস্কৃতিকে আরও উৎসাহিত করতে পারে।

উল্লেখ্য, গত অক্টোবরে তাকাইচি জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন এবং দায়িত্ব নেওয়ার সময় প্রতিশ্রুতি দেন, তিনি শুধু ‘কাজ, কাজ, আর কাজ’ করবেন। এখনো তিনি সরকারি বাসভবনে ওঠেননি। দাবি করেছেন, বাসায় তাঁর ফ্যাক্স মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভোর রাতেই তিনি সরকারি বাসভবনে গিয়ে ৯টার বৈঠকের জন্য ব্রিফিং পড়েন।

তবে সমালোচকেরা বলছেন, এই ঘটনাই দেখিয়ে দিয়েছে—সরকারগুলো জাপানের কঠোর কর্মসংস্কৃতি বদলাতে ক্রমাগত ব্যর্থ হয়েছে। দেশে অনেক কর্মীকে দিনের দীর্ঘ কাজ শেষে সহকর্মীদের সঙ্গে সামাজিকতা করতেও বাধ্য করা হয়, যা মানসিক চাপ আরও বাড়ায়। এর মধ্যে আবার সরকারের ‘ওভারটাইম’ সীমা বাড়ানোর আলোচনা জনমনে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

তাকাইচি অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, যে কোনো পরিবর্তনেই শ্রমিকদের স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তিনি বলেছেন, ‘যদি এমন পরিবেশ তৈরি করতে পারি যেখানে মানুষ সন্তান বা পরিবারকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি কাজ, অবসর আর বিশ্রামের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে পারে—সেটাই আদর্শ।’

এদিকে তাকাইচির ভোর রাতের বৈঠককে ‘উন্মাদনা’ বলে আখ্যা দেশটির দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতা ইয়োশিহিকো নোদা। তিনি বলেন, ‘তিনি কাজ করতে চাইলে করতে পারেন, কিন্তু অন্যদের জড়ানো ঠিক নয়। সবাই তো ওই সময়ে ঘুমিয়ে থাকে। দেশের শীর্ষ নেতার এমন মনোভাব দুঃখজনক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

একটি সাইকেলযাত্রা শেষ করতে ৪০ বছর লাগল তিন বন্ধুর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দক্ষিণ চিলির প্রত্যন্ত পাতাগোনিয়া অঞ্চলের রাস্তা ধরে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছেন তিন বন্ধু। ছবি: বিবিসি
দক্ষিণ চিলির প্রত্যন্ত পাতাগোনিয়া অঞ্চলের রাস্তা ধরে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছেন তিন বন্ধু। ছবি: বিবিসি

১৯৮৫ সালে চিলির পুন্তা আরেনাস থেকে আলাস্কার অ্যানকারেজ পর্যন্ত প্রায় ১৭ হাজার মাইলের এক দুর্দান্ত মাউন্টেন বাইক অভিযানে নেমেছিলেন তিন স্কটিশ বন্ধু—সোফি ট্র্যাফোর্ড, রোনা হালবার্ট এবং ক্রেগ সোয়ান। তবে দক্ষিণ চিলির প্রত্যন্ত পাতাগোনিয়া অঞ্চলের একটি অংশে তখন কোনো সড়ক ছিল না। ফলে তাঁদের বাধ্য হয়ে একটি ফেরি নিতে হয়েছিল এবং যাত্রা পরিকল্পনা অনুযায়ী সেই অংশটি তাঁদের অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিবিসি জানিয়েছে, চার দশক পর আবারও একত্র হলেন তিন বন্ধু। গত ৪০ বছরে পাতাগোনিয়ার সেই দুর্গম এলাকায় প্রায় ৮০০ মাইল নতুন রাস্তা তৈরি হয়েছে। এই সুযোগেই তিন বন্ধু আবারও মিলিত হয়ে সেই অসম্পূর্ণ যাত্রাটি সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন। দীর্ঘ বছরের ব্যবধানে তাঁদের বয়স বর্তমানে ৬২ বছর হয়ে গেলেও চ্যালেঞ্জটি গ্রহণের জন্য তাঁরা যথেষ্ট উদ্দীপ্ত ছিলেন।

ষাটোর্ধ্ব বয়সে সম্প্রতি ২৬ দিনের কঠিন এই বাইকযাত্রা সম্পন্ন করে ক্রেগ সোয়ান বলেছেন, ‘চল্লিশ বছর পরেও আমরা একটি যাত্রা শেষ করলাম—এটাই বলে দেয় আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব কতটা গভীর।’

চিলির বিখ্যাত কারেতেরা অস্ট্রাল রোড ধরে দক্ষিণ দিকে সাইকেল চালিয়ে ভিলা ও’হিগিন্স নামের ছোট্ট এক শহরে পৌঁছে তাঁরা তাঁদের বহু বছর আগের স্বপ্নযাত্রাটি অবশেষে সম্পন্ন করেন। এই যাত্রার মাধ্যমে তাঁরা স্কটল্যান্ডের ফোর্থ ভ্যালির ম্যাগিজ ক্যানসার সেন্টার এবং এপিলেপসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছেন।

ক্রেগ সোয়ান, সোফি ট্র্যাফোর্ড এবং রোনা হালবার্টের বর্তমান বয়স ৬২ বছর। ছবি: বিবিসি
ক্রেগ সোয়ান, সোফি ট্র্যাফোর্ড এবং রোনা হালবার্টের বর্তমান বয়স ৬২ বছর। ছবি: বিবিসি

তিন বন্ধুর মধ্যে সোফি ট্র্যাফোর্ড থাকেন স্কটল্যান্ডের স্টার্লিং-এর কাছাকাছি ব্যালফ্রনে। বর্তমানে তিনি করপোরেট ফাইন্যান্সে কর্মরত। সোফি জানান, এই যাত্রাটি ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে কঠোর শারীরিক চ্যালেঞ্জ। এপিলেপসির কারণে তাঁর ছেলে হেক্টরের আকস্মিক মৃত্যু হয়েছিল। পাতাগোনিয়ার পাহাড়, হিমবাহ-উৎপন্ন নদী আর অনাবিল প্রকৃতি তাঁকে তাঁর ছেলের কাছাকাছি থাকার অনুভূতি দিয়েছে। সোফি বলেন, ‘হেক্টর এই জায়গাগুলো ভীষণ ভালোবাসত।’

আরেক বন্ধু রোনা হালবার্ট জানিয়েছেন, স্তন ক্যানসারের চিকিৎসার পর তিনি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলেন। তবে তিন বন্ধুর এই পুনর্মিলন ও অসমাপ্ত পথ পাড়ি দেওয়া তাঁর জন্য ছিল এক ধরনের নিরাময়ের প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, ‘যাত্রা শেষ করার মুহূর্তটি ছিল খুবই আবেগঘন।’

দলের একমাত্র পুরুষ সদস্য ক্রেগ সোয়ান অবশ্য বিবিসির সাবেক সাংবাদিক। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর দুই বন্ধুর ব্যক্তিগত শোকের গল্প এই অভিযানে তাঁদের অদৃশ্য শক্তি দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটা ছিল আমাদের জীবনের এক অধ্যায় সম্পূর্ণ করা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত