Ajker Patrika

রপ্তানির প্রভাবে প্রতি মণে দাম বেড়েছে ৮ হাজার টাকা

বরিশাল প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২১, ০৯: ২৪
রপ্তানির প্রভাবে প্রতি মণে দাম বেড়েছে ৮ হাজার টাকা

টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর গত ২৬ অক্টোবর ইলিশে সয়লাব হয়ে যায় মোকাম। ওই দিন ২ হাজার মনের বেশি ইলিশ ওঠে বরিশাল মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। কিন্তু মাত্র দুই দিনের মাথায় ফের ভারতে রপ্তানির প্রভাবে ইলিশের বাজারে যেন আগুন লেগেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মণপ্রতি ইলিশের দাম বেড়েছে ৭-৮ হাজার টাকা। মোকামে ইলিশ আসার হারও অপ্রত্যাশিতভাবে অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। ভরা মৌসুমেও স্থানীয় বাজারে ইলিশের এমন দামে সংশ্লিষ্টরা অসন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, স্থানীয় চাহিদা পূরণে রপ্তানির জন্য বাজার মনিটরিং জরুরি।

বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার ৭০০-৮০০ মণ ইলিশ এসেছে। দুই দিন আগেও এ মোকামে প্রায় ২ হাজার মন ইলিশ এসেছিল।

বরিশালের ইলিশ মোকামের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার এলসি (৬০০-৯০০) সাইজের ইলিশ প্রতি মণ ৩৫-৩৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা শেষের পর প্রথম দিন গত ২৬ অক্টোবর এলসি সাইজের ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ২৭-২৮ হাজার টাকায়।

একইভাবে গতকাল এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ৩৮ থেকে ৪০ হাজার টাকা। অথচ নিষেধাজ্ঞা শেষে বিক্রি হয়েছে ৩৪-৩৫ হাজার টাকা দরে। ভ্যালকা (দুইটিতে ১ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ২৭ হাজার টাকা মণ। দুই দিন আগে এ ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২১-২২ হাজার টাকা দরে।

মাত্র ২ দিনের ব্যবধানে ইলিশ আসা কমে যাওয়া এবং দাম চড়া হওয়ার কারণ জানতে মোকামের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, নিষেধাজ্ঞার আগে যে রপ্তানি শুরু হয়েছিল তা আবার শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবারও রপ্তানির জন্য এলসি সাইজের (৬০০-৯০০ গ্রাম) ইলিশ সাফ করে নেওয়া হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, এ মোকামে নানা শর্তের কারণে দূরদূরান্ত থেকে ইলিশ আসা কমে যাচ্ছে। মৎস্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তাও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নিষেধাজ্ঞার আগে বরিশালে যেভাবে দেদার ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, তেমনটা এখন করলে স্থানীয় বাসিন্দারা ইলিশ খেতে পারবেন না।

পোর্ট রোড মৎস্য মোকামে ইলিশ কিনতে আসা মশিউর দিপু ক্ষুব্ধ কণ্ঠে জানান, বরিশালে এত ইলিশ, কিন্তু তারা খেতে পারছেন না।

জানতে চাইলে বরিশাল জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, নিষেধাজ্ঞার পর প্রথম দুই দিন ইলিশ আমদানি ছিল ব্যাপক। এখন অনেকটা কমেছে। তবে আগামী জো তে বাড়বে। তিনি অকপটে স্বীকার করেন যে ইলিশের দামও বেড়েছে অনেক। অবশ্য ড. বিমল দাবি করেন, মৎস্য অধিদপ্তরের কাজ ইলিশ উৎপাদন করা। দাম নিয়ন্ত্রণ তাদের বিষয় নয়। নতুন করে রপ্তানি শুরু হয়েছে। এলসি সাইজই বেশি যাচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় বাজার থেকে কী পরিমাণ রপ্তানি হবে তা তাদের দেখার বিষয় নয়।

কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বরিশালের সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ দত্ত বলেন, এ বছর ইলিশের স্বাদই নিতে পারল না বরিশালের মানুষ। প্রশাসনকে তো ইলিশের প্রতি সাধারণের আকর্ষণ মেটানো নিশ্চিত করতে হবে। দামও সহনীয় থাকা দরকার। রপ্তানি যদি এমন পরিমাণ হয় যে বরিশালবাসী ভরা মৌসুমেও ইলিশ খেতেই পারবেন না, তাহলে ইলিশ নিয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের এত চেষ্টা প্রশ্নের মুখে পড়বে। এ জন্য বরিশালে ইলিশ রপ্তানি একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে থাকা দরকার। প্রভাবশালীরা সুযোগ নেবেই। কিন্তু বাজার মনিটরিং এ প্রশাসনের কী ভূমিকা তা দেখা দরকার। ইলিশের দর আর রপ্তানি ইস্যুতে আগামী টাস্ক ফোর্স সভায় কথা বলব।

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ