Ajker Patrika

নির্বাচনের ফাঁদে জেলেরা

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২১, ১১: ৩০
নির্বাচনের ফাঁদে জেলেরা

বরিশালের অনেক জেলে এখনো পাননি খাদ্য সহায়তা। অথচ ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা এক সপ্তাহ আগেই শেষ হয়ে গেছে।

মৎস্যজীবীদের দাবি, স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বাররা জেলে কার্ড নিয়ে ভোটের রাজনীতি করছেন। বিশেষ করে সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ও চন্দ্রমোহনে এখন পর্যন্ত ২০ কেজি করে চাল পাননি সহস্রাধিক জেলে। অভিযোগ, সেখানকার চেয়ারম্যান ও মেম্বারেরা ভোটের পেছনে ছোটায় এই দুর্ভোগ।

ইচ্ছা করে নির্বাচনের ঠিক আগে আগে চাল বিতরণের নামে প্রচারণা চালানোর উদ্দেশ্যে এমনটা করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন কেউ কেউ। এদিকে চরমোনাই এবং চরকাউয়া ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধিদের মুখচেনারা জেলে কার্ডের তালিকায় রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আগামী ১১ নভেম্বর সদরের বিভিন্ন ইউনিয়নে ভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

চন্দ্রমোহন ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ড বাসিন্দা এবং জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির ইউনিয়ন সভাপতি আকবার হোসেন বলেন, এ ইউনিয়নে ১২০০ জেলের ২০ কেজি করে চাল পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৪০০ জেলেকে এখন পর্যন্ত চাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। চেয়ারম্যান, মেম্বাররা নিজস্ব লোকদের চাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। নির্বাচনের কারণে তাঁদের দেখা পাওয়াও মুশকিল এখন। সচিবকেও পাওয়া যাচ্ছে না। ওই ৪০০ জনের তালিকা করে সোমবার সচিবের কাছে দেবেন বলে জানান।

মৎস্যজীবী নেতা আকবর আরও বলেন, জেলে না এমন মানুষও চাল পায়। পরে চেয়ারম্যান মাস্টার রোলের মধ্যে ওই নাম যুক্ত করে দেন।

চন্দ্রমোহন ইউপি সচিব সুবধচন্দ্র দাস জানান, ৮০০ জেলেকে চাল দিয়েছেন। এখনো ৪০০ জনের চাল দেওয়া বাকি। এই ৪০০ জনকে নিয়ে মেম্বাররা রাজনীতি করছেন। মেম্বাররা ভোট কেনেন জেলে কার্ড দিয়ে।

নিষেধাজ্ঞার শেষ হলেও শায়েস্তাবাদে চাল পাননি জেলেরা। এখানকার ইউপি সচিব মো. আরিফুর রহমান বলেন, আজ মঙ্গলবার বিতরণ করা হতে পারে। ইউনিয়নে চেয়ারম্যান-মেম্বর পদে ভোট থাকায় ব্যস্ততার কারণে দেরি হচ্ছে। ইউপি সচিব বলেন, তার ইউনিয়নে তালিকাভুক্ত জেলে ৯০৮ জন। চাল দেওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছেন ৬৬২ জন।

জাতীয় ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির শায়েস্তাবাদ ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ জানান, তার ইউনিয়নে গতকাল সোমবার পর্যন্ত জেলেদের চাল দেওয়া হয়নি।

শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জেলে ওমর আলী শরীফ বলেন, যখন মাছ ধরা বন্ধ ছিল তখন তাদের চাল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও চাল পাওয়া যায়নি।

জেলে আইয়ুব আলী জানান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলেদের ওই চাল দেওয়া হতে পারে।

শায়েস্তাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান মুন্নান বলেন, অডিটের কাজে সচিব ব্যস্ত ছিলেন, তিনিও ভোটে ব্যস্ত ছিলেন তাই চাল দিতে পারেননি। সোমবার চাল দেওয়া হবে।

জানা গেছে, চরমোনাই ইউনিয়নে ৮১৯ জেলেকে চাল দেওয়া হয়েছে। তবে স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুন গাজী বলেন, ‘চেয়ারম্যান ওই চাল কী করেছেন কীভাবে দিয়েছেন তা জানা নেই। আমাদের পরামর্শ নেওয়া হয় না। শোনা যায় ভোটের সময় চাল দেওয়া হয়েছে ভোটারদের মুখ দেখে।

চরকাউয়া ইউনিয়ন পরিষদে ৩১২ জেলেকে চাল দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন সচিব শহিদুল ইসলাম বলেন, জেলেরা আগেই চাল পেয়েছেন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, ভোটের প্রভাবে এবার প্রকৃত জেলে নয় এমন অনেকে চাল পেয়েছেন।

জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতি বরিশাল জেলা সভাপতি সেলিম হোসেন বলেন, এই চাল আগে থেকেই দেওয়ার কথা। কিন্তু শায়েস্তাবাদ এবং চন্দ্রমোহনে এখনো সম্পন্ন করতে পারেনি।

জাতীয় ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সিকদার বলেন, জেলেদের প্রণোদনার চাল নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বরেরা ভোটের রাজনীতি শুরু করেছেন। জেলে ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য এক সপ্তাহ পরও স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বররা চাল বিতরণ করছেন না।

বরিশাল সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সঞ্জিব সন্যামত বলেন, সায়েস্তাবাদে চাল বরাদ্দ হয়েছে। সেখানে চাল দেওয়াও শুরু হয়েছে। কিন্তু সব হয়তো শেষ করতে পারেনি। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও জেলেদের কাছে চাল না পৌঁছানো অবশ্যই দুঃখজনক। ভোটের কারণে হয়তো কোনো কোনো ইউনিয়নে পৌঁছায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিখোঁজের দুই দিন পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা উদ্ধার

পুরান ঢাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন হত্যায় দুই শুটারসহ ৫ জন গ্রেপ্তার

আজকের নামাজের সময়সূচি: ১২ নভেম্বর ২০২৫

বিহারে বিজেপি-নীতীশ জোট এগিয়ে, বলছে বুথফেরত জরিপ

ট্রাফিক সার্জেন্টকে গালিগালাজ: কর কর্মকর্তা ফাতেমার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে লঘুদণ্ড

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ