Ajker Patrika

বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদের ৩ বছর

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ৩৫
বরিশাল সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদের ৩ বছর

বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) চতুর্থ পরিষদের ৩ বছর হলো আজ শনিবার। করপোরেশনের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ তার পরিষদ ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর শপথ গ্রহণ করেন। ৩ বছরে বড় সাফল্য সড়ক নির্মাণ, জলাবদ্ধতা রোধ এবং নগরের পরিচ্ছন্নতা এমনটাই দাবি বর্তমান পরিষদের। তবে সিটি করপোরেশনের কাছে তাঁদের প্রত্যাশাকে ছুঁতে পারেনি প্রাপ্তি, মন্তব্য নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের।

বরিশাল নগরীর বর্ধিত এলাকা ২৬ নম্বর ওয়ার্ড টিয়াখালীর বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান বলেন, করপোরেশনের আওতায় এসে যেন অভিশাপে পড়েছি। নগরে প্রবেশ করে নানা খাতে অর্থ দিতে হচ্ছে। কিন্তু এখনো হাঁটু জল এলাকায়, নেই বিদ্যুৎ লাইন, পানির সংযোগ। স্থানীয় কাউন্সিলরও খোঁজ নেন না।

২৪ নম্বর ওয়ার্ডের রুপাতলী হাউজিংয়ের একাধিক বাসিন্দা বলেন, জলাবদ্ধতা তাদের পিছু ছাড়ছে না। এই কষ্ট ৩ বছরেও দুর করতে পারেনি সিটি করপোরেশন।

২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির স্বীকার করেন, ব্যর্থতারই ৩ বছর কেটে গেছে। এলাকায় তেমন উন্নয়ন করতে পারেননি। কাউন্সিলর হুমায়ুন জানান, নগরবাসীর বহু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। যে সড়কে পানির লাইন নেই সেখানেও পানির বিল দিতে হয়। এত দুর্যোগে করপোরেশনে লাখ লাখ টাকা এলেও জনগণকে এর সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয়নি। সিটি করপোরেশনের স্থায়ী কমিটি ও টেন্ডার কমিটি নেই। এই দায় বর্তমান পরিষদের এবং মেয়রের।

নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সায়েস্তাবাদ-তালতলি সড়কের বাসিন্দা কাইউম হোসেন বলেন, ২ কিলোমিটার সড়কে চলতে কাঁদা পানিতে একাকার হতে হয়।

২২ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা বলেন, তারা নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত।

২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে লাঙল প্রতীকে মেয়র প্রার্থী ছিলেন প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদ হোল্ডিং ট্যাক্স, পানির বিল বাড়িয়েছে। এক টাকাও সরকার বিসিসিকে দেয়নি। কিন্তু নগরবাসী তো ট্যাক্স দিয়েছেন। রাষ্ট্র কি তা পায়নি? নিজস্ব অর্থায়নে ৫ বছরের গ্যারান্টিতে সড়ক নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ট্যাক্স বাড়িয়ে ওই টাকায় কয়েকটি সড়ক করা হয়েছে। নগরবাসী সড়কে ‘থ্রি ডি জেব্রা ক্রসিংয়ে’র মতো হাস্যকর উন্নয়ন দেখেছেন।

এসব ব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের ৩ বছরে নগরবাসীর প্রত্যাশা শতভাগ পূরণ করা যায়নি। তবে মেগা প্রকল্পগুলো অনুমোদনের অপেক্ষায়। নিজস্ব অর্থায়নে ৫ বছরের গ্যারান্টিতে সড়ক সংস্কার চলমান। খাল পরিষ্কারের জন্য পাওয়া ১ কোটি টাকা দিয়ে খালগুলো পরিষ্কার করায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়নি।

প্যানের মেয়র বলেন, ২০১৯ সালে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কেন তা পাশ হচ্ছে না তা জানা নেই। গত বাজেটে মাত্র ৬ ভাগ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তবে সরকারি বরাদ্দ না পেলেও মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বিসিসির দেনা অনেকটা কাটিয়ে উঠছেন। জনগণের ওপর হোল্ডিং ট্যাক্স এর বাড়তি চাপের খবর গুজব দাবি করে বলেন, আসলে বাঙালি ট্যাক্সে দিতে চান না।

ভবনের প্ল্যানের ক্ষেত্রেও অনেক ছাড় দেওয়া হচ্ছে বলে জানান প্যানেল মেয়র। তিনি বলেন, বরং মেয়রের চিন্তা, পরিকল্পনা নিয়ে অপপ্রচার চলছে। বিসিসির বর্তমান পরিষদ ১০০ ভাগ সফল না হলেও যা সামর্থ্য ও রসদ আছে তা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী ২ বছরে নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করা যাবে বলে আশা করেন প্যানেল মেয়র লিটু।

এদিকে সিটি করপোরেশনের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে জানতে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর মোবাইলে ফোন দিলে তিনি ধরেননি।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল নগর সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, ৩ বছরে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে সুষমভাবে কাজ হয়নি। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং খাল খনন না হওয়ায় দুর্ভোগ বাড়ছে। সিটি করপোরেশনের কোনো ফান্ড নেই। প্রজেক্ট যা দিয়েছে তা অনুমোদন হয়নি। কারণ প্রজেক্টগুলো অভার স্টিমেট, তাই একনেকে আটকে গেছে। নগর পরিকল্পনা সঠিক নয় বলে দাবি করে সুজন সম্পাদক বলেন, নগরবাসী বাড়তি হোল্ডিং ট্যাক্স দিলেও সুবিধা পাচ্ছেন না। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সব উন্নয়ন সম্ভবও না।

দায়িত্ব গ্রহণের ৩ বছরে বিসিসিতে কোনো কর্মসূচি আছে কিনা এ প্রসঙ্গে জানতে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মো. ফারুককে ফোন দেওয়া হলে তিনি কিছু বলতে চাননি। বরং এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ