Ajker Patrika

তৃণমূলে উন্নয়ন চান ভোটার

বরিশাল প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২১, ১১: ০১
তৃণমূলে উন্নয়ন চান ভোটার

নির্বাচনী ডামাডোল জোরেশোরেই বাজছে বরিশালের ৬টি ইউপিতে। প্রচারণা শুরু হওয়ায় প্রার্থীরাও ছুটছেন ভোটারদের দুয়ারে। এ জন্য গ্রামগঞ্জের পাড়ামহল্লা, চায়ের টেবিলে ভোটের আলোচনা এবং সমালোচনা তুঙ্গে। প্রার্থীরা আশবাদী হলেও সজাগ ভোটাররা। কেননা বিভাগীয় শহর সংলগ্ন সদর উপজেলার এ ৬টি ইউনিয়নে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন, অধিকার, সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন নাগরিকেরা। কীর্তনখোলা তীরের ৩টি ইউনিয়নের প্রধান সমস্যা নদী ভাঙন। আর সবগুলো রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, সাঁকো দিয়ে চলাচল, স্বাস্থ্যসেবার বেহাল চিত্র। এসব কারণে এবারের নির্বাচনে ইউনিয়নে ইউনিয়নে পরিবর্তন চান ভোটাররা।

কীর্তনখোলার পূর্ব পাশের ইউনিয়ন চরমোনাইতে ১৯ বছর ধরে পীর পরিবারের সদস্যরা ইউপি চেয়ারম্যান হয়ে আসছেন। এবার তাদের হঠাতে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিও ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় এ নিয়ে সবখানে আলোচনা চলছে। স্থানীয় ভোটার ও জনপ্রতিনিধিরা দাবি করেছেন, চরমোনাইতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। তারা নানা নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

চরমোনাই ইউনিয়নের ৮ নম্বর পশারীকাঠী গ্রামের কলেজশিক্ষক আমিনুর রহমান ঝান্ডা বলেন, ‘পীর পরিবারের ১৯ বছরের রাজত্বে চরমোনাইতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। সেখানকার রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। পীরের পরিবারের যে সদস্যই চেয়ারম্যান হয়েছেন তিনি কোণ উন্নয়নকাজই করেননি। উচ্চ শিক্ষার আলো থেকে চরমোনাইবাসী বঞ্চিত। কেননা এত বছরেও একটি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তারা নিজেদের মাদ্রাসা নিয়ে ব্যস্ত। চরমোনাইর দলের প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে নীরব আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ জন্য জনগণ এবার পরিবর্তন চায়।’

এই ইউপির বিশ্বাসের হাটের কয়েকজন কলেজ শিক্ষার্থী জানান, নদী ভাঙনেও তারা দিশেহারা। কলেজে লেখাপড়া করতে তাঁদের বরিশালে যেতে হয়। ইউনিয়নে কলেজ নেই এমনটা ভাবাই যায় না। তবে এটি চরমোনাইর কৌশল। এ জন্য ভোটে পরিবর্তন চান সাধারণ মানুষ।

তবে চরমোনাই ইউনিয়নে হাতপাখার প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিমের নির্বাচন পরিচালন কমিটির মিডিয়া সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, এবারের নির্বাচনে ব্যাপক সারা পাচ্ছেন। ভোটাররা শান্তি শৃঙ্খলা ও সহাবস্থান চেয়েছেন। উন্নয়ন নিয়ে ভোটারদের অসন্তোষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চরমোনাই পরিবারের আগের চেয়ারম্যানরাও যে বরাদ্দ পেয়েছেন তা সঠিকভাবে করেছেন। কালিগঞ্জ ও বিশ্বাসের হাট ভাঙছে। এ জন্য বিভিন্ন দপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, এলাকায় কাজ হয়নি-এটি মুখরোচক কথা। ইউনিয়নটিতে উচ্চ শিক্ষার জন্য কোণ কলেজ প্রতিষ্ঠা না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কলেজ করার চিন্তা ছিল। এটি না হওয়ায় প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়েছে জনগণের কাছে। তবে হাতপাখার বর্তমান চেয়ারম্যান প্রার্থী শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’

চরকাউয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিএম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র শাওন খান বলেন, তার এলাকায় নদী ভাঙন অন্যতম সমস্যা। কিন্তু চেয়ারম্যানের এ বিষয়ে কোণ ভূমিকা নেই। চরকাউয়া খেয়াঘাটের অভিশাপ অবৈধ বাসস্ট্যান্ড। রাস্তার উপর বাস ফেলে রাখায় দুর্ভোগে পড়তে হয় জনগণকে। খেয়াতেও পদে পদে ভোগান্তি। চরকাউয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর নয়ানি ইউপির বাসিন্দা আরিফ হোসেন এবং তছলিম উদ্দিন বলেন, নদী ভাঙনে পামের হাট থেকে খেয়াঘাট পর্যন্ত বিলীনের পথে। খেয়াঘাট সংলগ্ন ভাষানির পোল থেকে জনতার হাট পর্যন্ত ৩টি সাঁকো পেরিয়ে যেতে হয়।

এসব বিষয় চরকাউয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকার প্রার্থী মনিরুল ইসলাম ছবির ভাই এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মুনাওয়ারুল ইসলাম অলি বলেন, ‘নদী ভাঙন ঠেকাতে আমাদের চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিল না। খেয়াঘাটে দুর্ভোগ ভোটের পর ঠিক করা হবে। আর বাস টার্মিনাল সরাতে জায়গার প্রয়োজন। নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী আবারও নির্বাচিত হলে এসব বিষয়ে সোচ্চার থাকবেন।’

শায়েস্তাবাদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকার প্রার্থী আরিফুজ্জামান মুন্না। এখানকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ ইউনিয়নের সবচেয়ে অবহেলিত হলো খেয়াঘাট। এই ঘাটটি থেকে প্রতিদিন হাজারো মানুষ চলাচল করে। ঘাটে যাতায়াতের জন্য একমাত্র সড়কের অবস্থা বেহাল। তাই এবারের নির্বাচনে জনপ্রতিনিধির পরিবর্তন প্রয়োজন।

একই অবস্থা রায়াপাশা-করাপুর এবং চাঁদপুর, চন্দ্রমোহন ইউনিয়নেরও। উন্নয়নবঞ্চিত এসব ইউনিয়নের ভোটাররা এবারের ভোটে ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দিতে চান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ