Ajker Patrika

‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’র জেরে চা­লু হয়নি ৩ হাসপাতাল

শাপলা খন্দকার, বগুড়া
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭: ২৮
‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’র জেরে  চা­লু হয়নি ৩ হাসপাতাল

বগুড়ায় বিএনপির আলমের ২০ শয্যার তিনটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ১৫ বছরেও সেগুলো চালু হয়নি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে হাসপাতাল তিনটি চালু হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, জনবল সংকটই এর প্রধান কারণ।

হাসপাতাল তিনটি হলো নন্দীগ্রাম, সান্তাহার ও শিবগঞ্জের আলীয়ারহাট ২০ শয্যার হাসপাতাল। এ ছাড়া ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা গাবতলী উপজেলার কাগইলে পড়ে আছে আরেকটি হাসপাতাল।

জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালটির কোনো নথি নেই তাদের কাছে।

নন্দীগ্রাম উপজেলায় ২০ শয্যার হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০০২ সালে। প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজ শেষে উদ্বোধন করা হয় ২০০৬ সালে। যন্ত্রপাতি সরবরাহের পরও ১৫ বছরে চালু হয়নি এই হাসপাতাল। প্রায় একই সময়ে নির্মিত শিবগঞ্জ উপজেলার ২০ শয্যার আলীয়ারহাট হাসপাতালেরও একই অবস্থা।

একই সময়ে আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে আরেকটি ২০ শয্যার হাসপাতালের কাজ শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৪২ হাজার ৪৮৮ টাকা। কাজ পায় ঢাকার কোম্পানি কিট-ওয়ে প্যাক। তবে কাজ শেষ না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাপাত্তা হয়। দ্বিতীয় ধাপে কাজ শুরু করে ২০১৯ সালে হাসপাতালটির কাজ শেষ হয়। কিন্তু এই হাসপাতালও চালু হয়নি।

জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানাচ্ছে, নন্দীগ্রাম হাসপাতাল নির্মাণে ব্যয় হয় ৩ কোটি ২৬ লাখ ৭৩ হাজার ১৬৮ টাকা। আলীয়ারহাট হাসপাতাল নির্মাণে ব্যয় হয় ৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এই দুটি হাসপাতালের একটিতেও নেই চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারী। নষ্ট হচ্ছে হাসপাতালগুলোর লাখ লাখ টাকার যন্ত্র।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় বলছে, নন্দীগ্রাম হাসপাতালের জন্য ২০০৮ সালে ১৮টি পদ সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা, ছয়জন চিকিৎসক, পাঁচজন নার্স, একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন ল্যাব সহকারী রয়েছেন।

চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ শিবগঞ্জের আলীয়ারহাট হাসপাতালের জন্য পদায়ন করা হয় ১১ জনকে। তবে পরিচ্ছন্নতাকর্মী, পিয়ন, আয়া, ওষুধ বরাদ্দ না থাকাসহ নানা সংকটে তাঁদের সেখানে রাখা সম্ভব হয়নি। পরে পদায়ন পাওয়া চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংযুক্ত করা হয়। হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে অপারেশন থিয়েটারের যন্ত্রপাতি, এসিসহ অন্যান্য সামগ্রী।

আলীয়ারহাট হাসপাতালে একজন উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা ও একজন ফার্মাসিস্ট রয়েছেন। প্রেষণে তাঁদের এখানে রাখা হয়েছে। লোকজনকে তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।

বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২০ শয্যার হাসপাতালগুলোতে জনবল নেই। সরকার শুধু ভবন আর যন্ত্রপাতি দিয়েছে, কোনো লোকবল দেয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘লোকবলের জন্য আমরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছি। কাজ হয়নি।’

তবে এ যুক্তি মানতে নারাজ সাম্যবাদী আন্দোলনের বগুড়া জেলা ইউনিটের সদস্য আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতিবছর যে সংখ্যক মেডিকেল শিক্ষার্থী এবং নার্স পাস করে বের হয়, তাতে স্বাস্থ্য খাতে জনবল সংকট থাকার কথা নয়। সুতরাং এটি একটি খোঁড়া অজুহাত। তাঁর মতে, বগুড়ার তিন হাসপাতাল চালু না হওয়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসারই অন্যতম উদাহরণ।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) জেলা আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম পল্টু বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের বর্তমান দশার জন্য যে সরকারের অবহেলা দায়ী, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।’

সদর আসনের বিএনপির সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি সারা দেশে সুষম উন্নয়ন করছেন। আমি মানছি, দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু সেটা বগুড়াকে বাদ দিয়ে। বগুড়া বিএনপি অধ্যুষিত জেলা হওয়ায় বগুড়ার সাথে বৈষম্য করছে সরকার।’

তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু বলেন, ‘ঠিকাদার ঠিক সময়মতো কাজগুলো বুঝিয়ে দেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগকে। এ জন্য বিষয়টা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ