Ajker Patrika

কর্মকর্তার স্বস্তি, জেলের অস্বস্তি

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২১, ০৯: ৫৪
কর্মকর্তার স্বস্তি, জেলের অস্বস্তি

মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আজ সোমবার রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে। এবার মেঘনাসহ বিভিন্ন নদীতে হামলা, সংঘাতের ঘটনা বেশ আলোচিত ছিল। অভিযানে গিয়ে পানিতে পড়ে একজন কোস্টগার্ড সদস্য নিহতও হয়েছেন। হামলার শিকার হয়েছেন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও মৎস্য কর্মকর্তা। এর মধ্যেও দেদার ইলিশ ধরা ও বিক্রির খবর মিলেছে।

গতকাল রোববারও বরিশালে এক বাড়ি থেকে ১৫ মণ ইলিশ উদ্ধার হয়েছে। শেষ মুহূর্তে নদী তীরে হাট বসেছে মা ইলিশ বিক্রির।

মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, অভিযান বাধাগ্রস্থের নেপথ্যে মৌসুমি জেলে ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা। গতকাল রোববার পর্যন্ত বিভাগের ৬১৫ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায়। গত বছর ২২ দিনে জেল দেওয়া হয়েছিল ১ হাজার ১৩৩ জনের। মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালকের দাবি ৯০ ভাগ মা ইলিশ রক্ষা করা গেছে। কিন্তু অভিযান বেশি হলেও গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় অর্ধেক জেল-জরিমানা হওয়ায়, বিভিন্ন জায়গায় দেদার ইলিশ ধরা ও সংঘর্ষের ঘটনায় অভিযানের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজমুস সালেহীন বলেন, বিভাগের ৬ জেলায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় রোববার পর্যন্ত ৬১৫ জনকে জেলে পাঠানো হয়েছে। জরিমানা হয়েছে ১৮ লাখ টাকা, ইলিশ জব্দ ৮ লাখ মেট্রিক টন এবং জাল জব্দ হয়েছে ৫৪ লাখ মিটার। এবার গত ২০ দিনে অভিযান হয়েছে ২ হাজার ৫০৫টি। অপরদিকে গত বছর বিভাগে ২২ দিনে অভিযান হয়েছে ২ হাজার ৫০৫টি। অভিযান বেশি হলেও দণ্ড কম প্রসঙ্গে সহকারী পরিচালক নাজমুস সালেহীন বলেন, এবার অভিযান ছিল বেশ কড়াকড়ি। তাই জেলেরা নদীতে কম নেমেছে।

তবে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার শেষ মুহূর্তে বরিশালের মেঘনা, আড়িয়াল খাঁ, সন্ধ্যা, কীর্তনখোলা, কালাবদরে ইলিশ ধরার মহোৎসব চলেছে। গতকাল রোববার সদর উপজেলার সায়েস্তাবাদের রাজাপুর গ্রামে এক বাড়ি থেকে ১৫ মণ ইলিশ জব্দ করা হয়েছে বলে মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস স্বীকার করেছেন। গত কয়েক দিনে হিজলার আবুপুর ও মেহেন্দীগঞ্জের চরে হাট বসে মা ইলিশের।

বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, জনগণের অল্প টাকায় মাছ খাওয়ার প্রবণতার কারণে জেলেরা নদীতে নেমেছে। অনেক আড়তদারও এর সঙ্গে জড়িত। হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তিনি দাবি করেন প্রতিরোধ করেছেন বলেই বাধা এসেছে।

জানতে চাইলে ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির বরিশাল জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন সিকদার বলেন, এবার হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জে যেভাবে অভিযান হয়েছে তাতে ইলিশ রক্ষার চেয়ে জেলেদের ওপর অত্যাচার বেশি হয়েছে। বাড়িতে ঢুকে হামলা হয়েছে অন্তঃসত্ত্বা নারীর ওপরেও। হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জের নদীতে দেদার যারা মা ইলিশ ধরেছে তারা মৌসুমি জেলে।

এ প্রসঙ্গে হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, মৎস্যজীবীরা অভিযান ব্যর্থ দেখতে চায়। তারা বানোয়াট খবর ছড়ায়। একই কথা জানিয়ে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন বলেন, যারা চোরের মতো মা ইলিশ ধরেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তবে জাতীয় ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সিকদার বলেন, ২২ দিনে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে সফলতা ৬০ ভাগের বেশি হবে না। এ বছর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বরিশালের মেঘনায় বেপরোয়াভাবে ইলিশ নিধন করা হয়েছে। অভিযান চালাতে গিয়ে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং হিজলায় কোস্টগার্ডের জাহাজের ওপর হামলাসহ একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।

এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনিছুর রহমান বলেন, নিষেধাজ্ঞাকালে হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে এর সঙ্গে কেবল জেলে নয় মৌসুমি জেলে এবং চেয়ারম্যান-মেম্বাররাও জড়িত। তারা ঝুঁকি নিয়ে অভিযান করেছেন। হিজলায় একজন কোস্টগার্ড নিহত হয়েছেন। একই উপজেলায় মৎস্য কর্মকর্তা হামলার শিকার হন। মেহেন্দীগঞ্জে ইউএনও হামলার শিকার হয়েছেন। বাবুগঞ্জে ভূমি কর্মকর্তা হামলার মুখে পরেন। ঝালকাঠিতে ইউএনও হামলার শিকার হন। এসব ঘটনায় কারা জড়িত তা চিহ্নিত করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মামলা করছে। তারা মন্ত্রণালয়েও রিপোর্ট দিচ্ছেন।

উপপরিচালক আনিছুর রহমান জানান তাদের ধারণা এবার ৯০ ভাগ মা ইলিশ রক্ষা করা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ