Ajker Patrika

ভাঙনে ছোট হচ্ছে জনপদ

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২১, ০৯: ০২
ভাঙনে ছোট হচ্ছে জনপদ

রাঙামাটি নদীর অব্যাহত ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন। বিশেষ করে চরামদ্দি ও দাড়িয়াল ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। একই অবস্থা চরাদি ও দুধলের। এসব এলাকার ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে বসতি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ওই সব এলাকার মানুষ। অভিযোগ রয়েছে, জনপ্রতিনিধিরা সুনজর না দেওয়ায় প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীটি এসব এলাকায় বিপদ ডেকে আনছে।

চরামদ্দি ইউপির বাসিন্দা ও স্কুলশিক্ষক সালমান আজিম বলেন, ‘অব্যাহত ভাঙনে উপজেলার চরামদ্দি ইউনিয়নের জনবহুল উত্তর কাটাদিয়া গ্রামের চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় এক শ একর জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। চলতি সপ্তাহেই উত্তর কাটাদিয়া বাজার সংলগ্ন সড়কের প্রায় ১০০ ফুট রাঙামাটি নদীতে চলে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে এলাকার কাটাদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাটাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাটাদিয়া আনিছিয়া মোহাম্মদিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও এতিম খানা।’

উত্তর কাটাদিয়া ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আ. ছত্তার আকন জানান, গত শুক্রবার তাঁর এলাকার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সড়কের প্রায় ১০০ ফুট রাঙামাটি নদীতে ভেঙে গেছে। উত্তর কাটাদিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে সাহেবের হাট, চন্দ্রমোহন, বরিশাল পর্যন্ত এই সড়ক দিয়ে মানুষ চলাচল করে। সেখানকার বাজারও ভাঙনের মুখে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছুই করেনি। সেখানে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বরাদ্দ হলেও তা চলে গেছে অন্য জায়গায়।

দক্ষিণ কাটাদিয়ার ইউপি সদস্য হোসাইন আহমেদ বলেন, ‘বাজার, রাস্তা নদীতে চলে গেছে। এই সড়ক দিয়ে দক্ষিণ কাটাদিয়া থেকে বগা খেয়া পেরিয়ে উত্তমপুরে চলাচল করে মানুষ।

চরামদ্দি ইউপি চেয়ারম্যান গাউসেল আলম লাল বলেন, ‘রাঙামাটি নদীর ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ কাটাদিয়া এলাকা। প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় পাউবো তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। অথচ জনগণের রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাঙামাটি নদীর ভাঙন প্রবণ এলাকা।’ দাড়িয়াল ইউনিয়ন পরিষদও এই নদীর ভাঙনের মুখে রয়েছে বলে জানান তিনি।

দাড়িয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, তাঁর ইউপির লঞ্চঘাট, চর দাড়িয়েল রাঙামাটি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙছে একের পর এক এলাকা। এসব এলাকা ভাঙন রোধে স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাকেরগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, ‘রাঙামাটি নদীর তীরে চরামদ্দির কাটাদিয়া গ্রাম ভাঙনের মুখে পড়েছে। সেখানকার বাজার, বসতবাড়ি, রাস্তাও নদীতে চলে গেছে। দাড়িয়াল, চরাদিও ভাঙন প্রবণ।’ তিনি জানান, তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভাঙন রোধে মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। বরাদ্দ পেলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে এখনই ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি কোনো উদ্যোগ নেই।

দাড়িয়াল ইউনিয়নের বাসিন্দা ও জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা মো. মহসিন বলেন, ‘লাহারহাট থেকে পেয়ারপুর পর্যন্ত প্রায় ১২ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরত্ব রাঙামাটি নদীর। এ নদী ঘিরে বাকেরগঞ্জের ৪টি ইউপি-চরামদ্দি, দাড়িয়াল, চরাদি, দুধল ইউপি রয়েছে। গত কয়েক বছরে চরামদ্দি ও দুধল রাঙামাটি নদীর ভাঙনের শিকার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকার ভাঙন রোধে উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু অবহেলিত এলাকা হলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এসব এলাকার দিকে নজর না দেওয়ায় জনদুর্ভোগ বাড়ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ