Ajker Patrika

ভেড়ামারায় আওয়ামী লীগ নেতার কবর জিয়ারত করলেন বিএনপি প্রার্থী

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
আওয়ামী লীগ নেতার কবর জিয়ারত করেন বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা
আওয়ামী লীগ নেতার কবর জিয়ারত করেন বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসনে বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী প্রয়াত এক আওয়ামী লীগ নেতার কবর জিয়ারত করেছেন। এমন ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়েছে।

জানা গেছে, ভেড়ামারা উপজেলায় ধানের শীষের হয়ে প্রচারণা করছেন বিএনপি প্রার্থী রাগীব রউফ চৌধুরী। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বাহাদুরপুর ইউনিয়নের বিজেএম ডিগ্রি কলেজে শিক্ষার মান উন্নয়নে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে যোগ দেওয়ার আগে তিনি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুর রাজ্জাকের কবর জিয়ারত করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব শাহজাহান আলীসহ বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। এর পর থেকে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। অনেকে বলছেন শোভনীয় নয়, আবার কেউ কেউ এটিকে নিছক সামাজিক সৌজন্যতা বলে মনে করছেন।

এ বিষয়ে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে যুবলীগ নেতা সোহেল রানা পবন বলেন, ‘তিনি (রাগীব রউফ চৌধুরী) বাবার কবর জিয়ারত করেছেন, এটা সত্য। তাঁর সঙ্গে আমার দুই ভাই জুনিয়র হিসেবে কাজ করে। সেই সূত্রে হতে পারে। তবে আমরা কেউ উপস্থিত ছিলাম না।’

ভেড়ামারা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাড. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যাঁর কবর জিয়ারত করেছেন, তিনি ফ্যাসিবাদের দোসর, আওয়ামী লীগ নেতা। তাঁর ছেলেরা যুবলীগ নেতা, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা। আমি মনে করি, বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর আওয়ামী লীগ নেতার কবর জিয়ারত করে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা শোভনীয় নয়। মানুষ এটাকে খারাপ বলছে।’

জানতে চাইলে ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তিনি (আব্দুর রাজ্জাক) আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন, এটা আমার জানা ছিল না। আমি যত দূর জানি, তিনি জাতীয় পার্টি করতেন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। বারবার নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। তা ছাড়া অনেক বছর আগেই তিনি মারা গেছেন। সুতরাং, সেই আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেহেতু তিনি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, সেই সৌজন্যতার দিক থেকে তাঁর কবর জিয়ারত করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্যসচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, এটা কোনো ইস্যু নয়। এটা সামাজিক সৌজন্যতা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেরপুরের নালিতাবাড়ী: পিঁপড়ার ডিমে জীবিকা তাঁদের

অভিজিৎ সাহা, নালিতাবাড়ী (শেরপুর) 
পিঁপড়ার বাসা থেকে ডিম সংগ্রহ করছেন এক ব্যক্তি। 	ছবি: আজকের পত্রিকা
পিঁপড়ার বাসা থেকে ডিম সংগ্রহ করছেন এক ব্যক্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা

গারো পাহাড়ের জঙ্গলে সকাল থেকেই দেখা যায় একদল মানুষের দৌড়ঝাঁপ। কারও হাতে লম্বা লাঠি, তাতে বাঁধা জাল। তাঁদের লক্ষ্য একটাই—গাছের ডালে ঝুলে থাকা পিঁপড়ার বাসা খুঁজে বের করে সেখান থেকে ডিম সংগ্রহ করা। পিঁপড়ার হুলে জর্জরিত শরীর, তবুও মুখে হাসি। কারণ এভাবেই চলছে তাঁদের সংসার। শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে শতাধিক পরিবারের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন এখন এই পিঁপড়ার ডিম।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নালিতাবাড়ীর সমসচূড়া ও রামচন্দ্রকুড়া, আর ঝিনাইগাতীর বাঁকাকুড়া, গজনী, নয়া রাংটিয়া, বউবাজার ও বটতলা গ্রামের বাসিন্দারা পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহের সঙ্গে জড়িত। ভোর থেকে শুরু হয় তাঁদের ডিম সংগ্রহ অভিযান, চলে দুপুর পর্যন্ত। এরপর বিকেলে গ্রামের বাজারে বসে পিঁপড়ার ডিমের হাট। বিশেষ করে রাংটিয়া, বউবাজার ও বটতলা বাজারে প্রতিদিনই জমে ওঠে এ বিশেষ বেচাকেনা।

প্রতি কেজি ডিম বিক্রি হয় ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা দরে। একজন সংগ্রাহক দিনে গড়ে ৪০০-৭০০ গ্রাম পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করতে পারেন। পরে ডিমগুলো ওজন করে কার্টনে ভরে মহাজনের কাছে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় তালিকা অনুযায়ী সংগ্রহ করা ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেওয়া হয় প্রাপ্য টাকা। এভাবেই পাহাড়ের এই দরিদ্র পরিবারগুলো চালায় সংসার, মেটায় সন্তানের পড়াশোনার খরচও।

বড়শি দিয়ে মাছ ধরেন এমন শিকারিরাই এ ডিমের প্রধান ক্রেতা। কারণ, মাছ ধরার সময় এই ডিম প্রাকৃতিক টোপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই মাছ ধরার মৌসুম কিংবা প্রতিযোগিতা শুরু হলে পিঁপড়ার ডিমের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

দুই থেকে চারজন মিলে দল গঠন করে সংগ্রাহকেরা পাহাড়ের শাল-গজারি বন, ঝোপঝাড় ও বড় গাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করেন। তাঁরা ব্যবহার করেন জাল মোড়ানো বিশেষ লাঠি, যা দিয়ে নিরাপদ দূরত্ব থেকে পিঁপড়ার বাসা নামিয়ে আনা যায়। তবে ডিম তোলার সময় পিঁপড়ার দংশন থেকে রেহাই মেলে না কারও। তীব্র জ্বালা-যন্ত্রণা সহ্য করেই তাঁরা সংগ্রহ চালিয়ে যান পেটের দায়ে, টিকে থাকার তাগিদে।

জানতে চাইলে ডিম সংগ্রাহক কোপেন্দ্র কোচ (৪৫) বলেন, ‘আগে পাহাড়ে প্রচুর ডিম পাওয়া যেত। এখন গাছপালা কমে যাওয়ায় বাসাও কমে গেছে। তবু আয়-রুজির আশায় প্রতিদিন ভোর থেকে ডিম খুঁজে বেড়াই।’ ডিম সংগ্রহ করা বেশ কষ্টসাধ্য জানিয়ে শোয়েব হাসান (৩৮) বলেন, ‘পিঁপড়ার কামড়ে ম্যালা কষ্ট হয়। কিন্তু আয় আর সংসারের কথা ভেবে সহ্য করা লাগে। এখন এ কষ্ট সইয়া গেছে।’

ক্রেতা ইলিয়াস উদ্দীন (৪২) বলেন, ‘আমরা স্থানীয় বাজার থেকে ডিম সংগ্রহ করার পর প্যাকেটজাত করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাই। বর্ষা ও শীত মৌসুমে লাল পিঁপড়ার ডিমের জোগান থাকে সবচেয়ে বেশি, তখন বিক্রিও ভালো হয়।’

এ বিষয়ে গারো পাহাড়, বন্য প্রাণী ও নদী রক্ষা পরিষদের উপদেষ্টা আব্দুল মান্নান সোহেল বলেন, মানুষগুলোর প্রতিদিনের এ সংগ্রাম, পাহাড়ি প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা জীবনের গল্প যেন গারো পাহাড়ের মানুষের অদম্য টিকে থাকার প্রতিচ্ছবি। প্রকৃতির দান পিঁপড়ার ডিমই হয়ে উঠেছে তাঁদের জীবনের রুটি-রুজির একমাত্র উৎস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তাড়াশে সার ‘সংকট’: কৃষক-কর্মকর্তা মুখোমুখি

  • বরাদ্দের সার কাগজে বিতরণ দেখিয়ে দোকান বন্ধ।
  • ডিলারদের বিরুদ্ধে কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগ।
তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা
সারের জন্য কৃষকের ভিড়। গত বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জের তাড়াশ সদরের পার্থ এন্টারপ্রাইজের সামনে। ছবি: আজকের পত্রিকা
সারের জন্য কৃষকের ভিড়। গত বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জের তাড়াশ সদরের পার্থ এন্টারপ্রাইজের সামনে। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় রবি মৌসুমের শুরুতে সার নিয়ে বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয়েছে। ডিলারদের (পরিবেশক) একের পর এক দোকানে ঘুরেও সার না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন কৃষকেরা। কখনো স্লিপ পদ্ধতিতে, আবার কখনো উন্মুক্তভাবে সার বিতরণ করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। ডিলারদের বিরুদ্ধে কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগও উঠেছে। তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, এই উপজেলায় পর্যাপ্ত সার বরাদ্দ রয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় মোট ২৯ জন ডিলার আছেন। তাঁদের মধ্যে বিসিআইসির ১২ জন ও বিএডিসির ১৭ জন। এ ছাড়া পৌরসভা ও আট ইউনিয়নে ৭২ জন সাব-ডিলার রয়েছেন। আট ইউনিয়নের মধ্যে চার ইউনিয়নের মাঠে এখনো রোপা আমন রয়েছে, অর্থাৎ অর্ধেক জমিতে এই মুহূর্তে সারের প্রয়োজন নেই। তারপরও কৃষকদের এক ডিলার থেকে আরেক ডিলারের কাছে ছুটতে হচ্ছে।

কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে সরিষা, আলু, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন শাকসবজির জন্য প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সরিষা রয়েছে ১০ হাজার হেক্টরে। কৃষকদের অভিযোগ, মৌসুমের শুরুতে সব ডিলার একযোগে সার তুললে কোনো সংকট হওয়ার কথা নয়। বরাদ্দের স্বচ্ছ তালিকা এবং কোন ডিলার কত সার তুলেছেন, এ তথ্যসহ সিটিজেন চার্টার প্রদর্শন করা হলে অনিয়মের সুযোগ কমে যেত। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, কিছু ডিলার বরাদ্দের সার কাগজে বিতরণ দেখিয়ে দোকান বন্ধ করে রেখেছেন।

অন্যদিকে কৃষি অফিস থেকে বলা হচ্ছে, আজ এক ডিলার বিতরণ করবেন, কাল আরেকজন। আবার কখনো জমি অনুযায়ী স্লিপ পদ্ধতি, কখনো উন্মুক্ত পদ্ধতিতে সার বিক্রি চলছে। পরিবহনের অজুহাতও দেখানো হচ্ছে। এতে উপজেলায় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

কৃষি অফিসের তথ্যমতে গত বৃহস্পতিবার তাড়াশ সদরে তিনজন ডিলারের সার বিতরণ করার কথা ছিল। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে, শুধু পার্থ এন্টারপ্রাইজ কৃষকদের কাছে ন্যায্যমূল্যে সার বিক্রি করছে। সেখানে রাত ১০টা পর্যন্ত শত শত কৃষককে সারের জন্য ভিড় করতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে শহীদ মিনার চত্বরে মেসার্স চলনবিল পেট্রোলিয়ামে ইউরিয়া, টিএসপি ও পটাশ সার মিললেও কৃষকদের মূল চাহিদা ডিএপি নেই। প্রতিষ্ঠানটির মালিক তাইবুর রহমান জানান, মাসের শুরুতে ডিএপি বিতরণ করা হয়েছে। আর হাসপাতালে গেট এলাকায় মেসার্স আমজাদ এন্টারপ্রাইজের দোকান তালাবদ্ধ পাওয়া যায়।

সরকার কৃষকদের ডিএপি সার ব্যবহারে উৎসাহিত করছে। কৃষিবিদদের মতে, টিএসপির মতো হলেও ডিএপিতে ফসফরাসের পাশাপাশি ক্যালসিয়াম ও নাইট্রোজেন থাকায় এটি গাছের জন্য বেশি উপকারী। বাজারে ডিএপির চাহিদা বেশি হওয়ায় ডিলাররা এ সারেই কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন বলে কৃষকদের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, শত শত কৃষক এখনো প্রয়োজনীয় সার পাননি।

জানতে চাইলে কুন্দইল ও বৃপাচান গ্রামের কৃষক মোজাফ্ফর হোসেন, কামরুল ইসলাম, সবুজ, ফারুক এবং আলাউদ্দিন বলেন, ‘এখনো এক ছটাক সারও বরাদ্দ পাইনি। সরিষা আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’

অভিযোগ রয়েছে, কৃষকদের ভোগান্তি কমাতে ইউনিয়নভিত্তিক ডিলার ও সাব-ডিলার নিয়োগ দেওয়া হলেও কৃষি অফিসের ‘সাপলুডু খেলা’র কারণে কৃষকদের এক ইউনিয়ন থেকে আরেক ইউনিয়নে সার আনতে হচ্ছে। এতে শ্রম ও অতিরিক্ত পরিবহন খরচ পড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ডিলার বলেন, ‘অনেক সময় তাঁরা বরাদ্দের বাইরে অন্য উপজেলার সার কিনে আনেন, যাতে কৃষক ভোগান্তিতে না পড়েন। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এবার সেই ঝুঁকি নেননি।’

এদিকে চলনবিলের পানি ধীরে নামায় অনেক জমি এখনো চাষের উপযোগী হয়নি। তারপরও সার না পেয়ে হতাশ কৃষকেরা রবি ফসলের পাশাপাশি বোরো মৌসুমের সারও মজুত করে রাখছেন। ফলে যিনি বরাদ্দ পাচ্ছেন, তাঁর দোকানেই কৃষকদের ভিড় বাড়ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শর্মিষ্ঠা সেন গুপ্তা বলেন, ‘সারের কোনো সংকট নেই। কৃষক শুধুই হতাশ হচ্ছেন।’ তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘এই উপজেলার কৃষক নিয়ম মানতে চান না। তাঁরা কৃষি বিভাগের নির্ধারিত সারের তিন গুণ বেশি

ব্যবহার করেন। আগামীতে বেশ কয়েকটি বরাদ্দ রয়েছে। হতাশ হওয়ার কিছু নেই।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূসরাত জাহানের কাছে সারের কৃত্রিম সংকট এবং কৃষকের ভোগান্তি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘নিয়মিত তদারক করা হচ্ছে। কোনোভাবেই সারের সংকট হওয়ার কথা নয়। তারপরও এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সিডরের ১৮ বছর: উপকূলবাসী এখনো ভুগছে

  • দেড় যুগেও নির্মাণ করা হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ।
  • বরগুনার ৮০৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের প্রায় অর্ধেকই নিম্ন উচ্চতার।
  • বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
মনোতোষ হাওলাদার, বরগুনা
বিষখালী নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা গ্রাম। ২০০৭ সালে সিডরে জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় গ্রামটি। সেদিন এখানে জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ২০ ফুট। ঝড় থেমে গেলে অর্ধশতাধিক মানুষের লাশ পাওয়া যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিষখালী নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা গ্রাম। ২০০৭ সালে সিডরে জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় গ্রামটি। সেদিন এখানে জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ২০ ফুট। ঝড় থেমে গেলে অর্ধশতাধিক মানুষের লাশ পাওয়া যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ ১৫ নভেম্বর। ২০০৭ সালের এই দিনে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিডর। এর ধ্বংসলীলায় মুহূর্তেই পাল্টে যায় উপকূলীয় জনপদের চিত্র। ভেসে যায় বহু মানুষ, ঘরবাড়ি আর পশুপাখি। আজও সেই দুঃসহ দিনের কথা মনে করে আঁতকে ওঠেন উপকূলবাসী। তবে সিডরের ধ্বংসলীলার ১৮ বছরেও বরগুনার উপকূলীয় এলাকায় নির্মাণ করা হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ। ফলে এসব এলাকার বাসিন্দাদের জন্য ঝড়ের সংকেত মানেই যেন মৃত্যু-আতঙ্ক।

পরিবেশকর্মী আরিফ রহমান বলেন, বরগুনার উপকূলীয় মানুষের প্রধান দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ। প্রতিনিয়ত দুর্যোগের আতঙ্কে থাকা মানুষের জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।

সরকারি হিসাবে, সিডরে বরগুনা জেলায় ১ হাজার ৩৪৫ জনের মৃত্যু হয়। নিখোঁজের সংখ্যা ১৫৬। ঝড়ের কবলে পড়ে মারা যায় ৩০ হাজার ৪৯৯ গবাদিপশু এবং ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৯ হাঁস-মুরগি। জেলার ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬১ পরিবারের সবাই কমবেশি ক্ষতির শিকার হয়। গৃহহীন হয়ে পড়ে ৭৭ হাজার ৭৫৪ পরিবার।

বরগুনায় সিডরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সদর উপজেলার নলটোনা গ্রাম। সিডরের এক বছর আগে থেকে গ্রামটিতে কোনো বেড়িবাঁধ ছিল না। সেদিন এখানে জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ২০ ফুট। ঝড় থেমে গেলে অর্ধশতাধিক মানুষের লাশ পাওয়া যায়। তখনো এলাকা পানির নিচে। ফলে লাশ দাফনের জন্য শুকনো জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না।

পরে মরদেহগুলো নেওয়া হয় বরগুনা-নিশানবাড়িয়া সড়কের পাশে পশ্চিম গর্জনবুনিয়া গ্রামে। কাফনের কাপড় ছাড়াই ১৯টি কবরে দাফন করা হয় ৩০ জনকে। পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে চারটি কবরে তিনজন করে ১২ জন, তিনটিতে দুজন করে ছয়জন এবং ১২টিতে একজন করে ১২ জনের লাশ দাফন করা হয়।

টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে এখনো ভুগছে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা। প্রতিনিয়ত ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে ঢুকছে জোয়ারের পানি, নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি, ভেসে যাচ্ছে চিংড়ির ঘের।

বরগুনার সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি মনির হোসেন কামাল বলেন, প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়েই উপকূলীয় এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক জায়গায় পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে কিছুটা বাড়লেই ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়। তাই এখানে উঁচু ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় প্রায় ৮০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটারই নিম্ন উচ্চতার। সম্প্রতি ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধের ১৩ কিলোমিটারের তীর সংরক্ষণ, ৯ কিলোমিটারের ঢাল সংরক্ষণ এবং ৫১ কিলোমিটার মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে। আরও ৫০ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলমান।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছেন সদর উপজেলার নিশানবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আসলাম খান। সেদিন নিজে প্রাণে বেঁচে গেলেও হারিয়েছেন স্ত্রী ও সন্তানকে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘১৮ বছর ধরে টেকসই বেড়িবাঁধের স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি, কিন্তু আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আমাদের কষ্টের কথা কেউ শুনতে চায় না।’

বরগুনার মাঝের চরের বাসিন্দা মহসীন আলী বলেন, ‘আমাদের চরটি অর্ধেক বরগুনা আর অর্ধেক পাথরঘাটায় অবস্থিত হওয়ায় কোনো উপজেলা থেকে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ দেওয়া হয় না। সিডরের পর থেকে নানা দুর্যোগে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে স্বাভাবিক জোয়ারেই আমাদের চর প্লাবিত হয়। বন্যা কিংবা জলোচ্ছ্বাস এলে তো কথাই নেই।’

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, জেলায় অনেকগুলো প্রকল্পের মাধ্যমে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে টেকসই বাঁধের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে কিছুটা হলেও জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে রেহাই মিলবে। এ ছাড়া অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের কীভাবে সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে নিয়ে আসা যায়, তা নিয়েও কাজ চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝিনাইদহে ২ মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ, যুবক নিহত

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে সুমন (২২) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ সময় আরও দুজন আহত হয়েছে।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার তালেশ্বর নামক স্থানে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।

নিহত সুমন উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে। আহত তৌকির আহমেদ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ভুটিয়ারগাতি গ্রামের শামীম হোসেনের ছেলে ও জিহাদ হোসেন পোড়াহাটি গ্রামের হানিফ কাজীর ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, নিহত সুমন বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালিয়ে কোটচাঁদপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলেই সুমন নিহত হন। তিনি সড়কে সব সময় বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাতেন বলে উল্লেখ করেন স্থানীয়রা।

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অপর মোটরসাইকেলের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে তিনি নিহত হন। নিহত সুমনের মরদেহ উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত